এখনো রয়ে গেল আঁধার
কৈশোরে গ্রামীণ আবহভিত্তিক সিনেমায় প্রায়শই কিছু দৃশ্য চোখে পড়ত। তার মধ্যে একটি হলোÑ গঞ্জের একটি বটগাছের নিচে গ্রামের কতিপয় ময়মুরব্বি মাতব্বরকে সঙ্গে নিয়ে কোনো একটি বিচারকার্য সম্পাদন করছেন। আগে গ্রামগুলোতে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে কিংবা দুই পরিবারের মধ্যে কোনো বিষয়ে বিবাদ বা ঝগড়া হলে কোট-কাছারি না করে আপসে মীমাংসা করাই ছিল রেওয়াজ। এই কাজটি করত গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটি। গ্রামবাংলার বিরোধ-মীমাংসার এটি একটি প্রাচীনতম পদ্ধতি। তবে এখন আর এমন দৃশ্য খুব একটা চোখে পড়ে না। সময় পরিবর্তিত হয়েছে। অনুন্নত দেশ থেকে স্বল্পোন্নত, স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হচ্ছে এ দেশ। আমাদের শৈশবের গ্রামগুলোতেও পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। গ্রামের সঙ্গে গ্রামীণ সালিশির ধরনও পাল্টেছে। এখন কথায় কথায় মানুষকে কোট-কাছারির দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। গ্রাম পঞ্চায়েতের মাধ্যমে আর সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। এসব নেতিবাচক খবর পড়তে পড়তে তখন হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়।
গ্রাম্য সালিশি বিচারব্যবস্থা আমাদের পূর্বপুরুষের আমলেও ছিল, বর্তমানেও আছে। তবে কিছু ভিন্নতা স্পষ্ট। তখন বিচারকার্যে যথেষ্ট সততা ছিল। তাই অধিকাংশ মানুষই ন্যায়বিচার পেত। বিচারকরা এখান এক কথা, আবার একটু পরে আরেক রকম কথা বলতেন না। কারও মুখের দিকে চেয়ে তাদের বিচারকার্য পরিচালনা করতে হতো না। কোনো ক্ষমতার দাপটকেও ভয় পেতেন না। আবার অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে বিক্রিও হয়ে যেতেন না তারা। দিনে দিনে সেই গ্রাম্য সালিশি ব্যবস্থায় এখন ঢুকে পড়েছে পক্ষপাতিত্ব, রাজনীতি ও অবৈধ অর্থের লেনদেন। কিছু ক্ষেত্রে গ্রাম আদালতেও চলছে বিচারের নামে প্রহসন। ধর্ষণের মতো ঘটনাও ভিন্ন খাতে নেওয়া হচ্ছে। ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে ফৌজদারি অপরাধও। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারন মানুষ। বেড়ে যাচ্ছে অপরাধের মাত্রা।