অবকাশের ফুরসত কই?
ছোটবেলায় পড়েছি সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। শিক্ষকগণ নানা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে এই মহামূল্যবান বাণীর তাৎপর্য আমাদের বুঝিয়েছেন। আমরাও বুঝেছি সময় হেলার পাত্র নয়, তাকে অবহেলা করা চলবে না। তাই সেই ছোট কাল থেকেই আমরা পরতে পরতে সময়ের হিসাব নেয়া শুরু করেছি, পাছে যেন অপব্যয় না হয়ে যায়। এই হিসাব করার ব্যাপারটি বা সময়ানুবর্তিতা নিঃসন্দেহে মানবজীবনের একটি মহৎ গুণ। তবে হিসাবের খাতায় সময়ের বণ্টন সুষম না হলে তখন লাভের থেকে ক্ষতির মাত্রা যেন বেশি ঘটে।
মানুষের চাহিদার কোনো শেষ নেই। মানুষ তার নানামাত্রিক চাহিদা পূরণে সব সময়ই ব্যস্ত। কর্মব্যস্ততা মানুষের জীবনকে গতিময়তা দান করে। নানা রকমের কাজে ব্যস্ত থাকলে মানুষ আজেবাজে চিন্তা-ভাবনা থেকে মুক্ত থাকতে পারে। কিন্তু এ কর্মব্যস্ততা মাঝে মাঝে অতিরিক্ত পর্যায়ে চলে যায়। কর্মময় জীবনের কৃত্রিম জালে আবদ্ধ মানুষ ভাবলেশহীন যন্ত্রে পরিণত হয়। ব্যস্ততার এ জাল ছিঁড়ে সামান্যতম অবকাশ যাপন করার মতো সময় থাকে না। নিজের ভালো লাগা মন্দ লাগাকে মানুষ বিক্রি করে ফেলে কর্মব্যস্ত জীবনের কাছে। এর প্রভাব অত্যন্ত ক্ষতিকর। অবকাশহীন একঘেয়ে কর্মজীবন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে ফেলে মানুষকে। এর প্রভাবে নানা রকম জটিল মনোরোগ দেখা দেয়। এতে মানুষের আচরণে অনেক অস্বাভাবিকতা আসতে পারে। অনেক সময় হতাশা ও বিষণ্নতা জীবনে স্থায়ী রূপ লাভ করে। নিত্যদিনের কর্মব্যস্ততায় চাপা পড়া মন মাঝে মধ্যেই হারিয়ে যেতে চায় কল্পনার জগতে, পেতে চায় প্রজাপতির মতো অবাধ স্বাধীনতা। ইচ্ছা হয় জীবনের রঙিন স্বপ্নগুলো ছুঁয়ে দেখার। হাজারো চিন্তায় জর্জরিত মন আর্তনাদ করে উঠে সামান্য একটু স্নিগ্ধ অবকাশের আশায়। অবকাশ মানুষের জীবনকে প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরপুর করে তোলে। অবকাশ যাপন যেন নতুন করে জীবন শুরু করার এক প্রস্তুতি পর্ব।
- ট্যাগ:
- মতামত
- চাকরি
- কর্মসংস্থান
- ব্যবসা
- অবকাশ