কর হার কম হলে অনেক প্রতিষ্ঠানই শেয়ারবাজারে আসবে
বাজেটে শেয়ারবাজারের বিষয়েও কিছু নির্দেশনা থাকে। এগুলো স্বাভাবিক ব্যাপার। সরকার তার উন্নয়ন ব্যয় মেটানোর জন্য ব্যাংক ব্যবস্থা, বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করে থাকে। আমরা সরকারকে অনুরোধ করি, ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ গ্রহণ না করে এ অর্থ যেন বন্ড মার্কেট থেকে সংগ্রহ করে। পৃথিবীর সব দেশেই সরকার তার ঘাটতি বাজেট বন্ড মার্কেট থেকে অর্থ সংগ্রহ করে মিটিয়ে থাকে। সরকারের বন্ড মার্কেট ডেভেলপ করলে করপোরেট বন্ড মার্কেট ডেভেলপ হয়। আমাদের শেয়ারবাজার ইক্যুইটিভিত্তিক। এখানে বন্ডের অংশ খুবই কম। করপোরেট বন্ড মার্কেটের যদি উন্নয়ন ঘটে, তাহলে আমাদের সিকিউরিটিজ মার্কেট ডেভেলপ করবে। সিকিউরিটিজ মার্কেটের উন্নয়ন ঘটলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো। কারণ আমাদের দীর্ঘমেয়াদি ঋণের চাহিদা সিকিউরিটিজ মার্কেট থেকে মেটানো সম্ভব হবে। উদ্যোক্তাদের দীর্ঘমেয়াদি ঋণের জন্য ব্যাংকের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভর করতে হবে না।
সরকার তার উন্নয়ন ব্যয় মেটাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। এ অবস্থায় নতুন নতুন পৌরসভা সৃষ্টি করা হলে তার ব্যয়ভার কিভাবে নির্বাহ করবে? বিভিন্ন দেশে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয়ভার নির্বাহ করার জন্য মিউনিসিপ্যালিটি বন্ড বাজারে ছাড়া হয়। এ বন্ডের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ দিয়ে পৌরসভার প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করা হয়। এ ছাড়া জনগণের কাছ থেকে ট্যাক্সের মাধ্যমে কিছু অর্থ সংগ্রহ করা হয়। এভাবেই তারা ব্যয় নির্বাহ করে। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ অর্থের জন্য সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে না। আমরা যদি মিউনিসিপ্যালিটি বন্ড বাজারে ছাড়ার ব্যবস্থা করতে পারতাম, তাহলে পৌরসভাগুলো তাদের ব্যয় নিজেরাই সংকুলান করতে পারত। এতে সরকারের ওপর চাপ অনেকটাই কমে যেত। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও বাড়ানোর শর্ত দিয়েছে। আমি প্রস্তাব করব, আগামী অর্থবছরের বাজেটে মিউনিসিপ্যালিটি বন্ড ইস্যু করার ব্যবস্থা রাখা হোক। সরকারের বাজেট ঘাটতি বন্ড মার্কেট থেকে মেটানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার যদি ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে থাকে, তাহলে ব্যক্তি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে। ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট দেখা দিতে পারে। এতে উৎপাদন হ্রাস পাবে। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পথে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেবে। মিউনিসিপ্যালিটি বন্ড ইস্যু করা হলে শুধু যে সরকার লাভবান হবে তা নয়, সব শেয়ারবাজার লাভবান হবে। এতে করপোরেট বন্ড মার্কেট উন্নয়ন হবে। মিউনিসিপ্যাল বন্ড মার্কেট ডেভেলপ করবে। অর্থাৎ আমি বলতে চাচ্ছি, সরকার তার উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন ব্যয় মেটানোর জন্য ব্যাংকের ওপর নির্ভর করবে না। সরকার তার প্রয়োজনীয় অর্থ শেয়ারবাজার ও বন্ড মার্কেট থেকে তুলে নেবে। আবার সরকার যদি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বেশি অর্থ ঋণ করতে থাকে, তাহলে বাজারে অর্থ সরবরাহ বেড়ে যাবে। এতে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়ে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। অথচ সরকার যদি শেয়ারবাজার ও বন্ড মার্কেট থেকে তার প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করে, তাহলে এসব সমস্যা থেকে বাঁচা যেতে পারে।