বৃদ্ধ মায়েরা কেন পরিত্যক্ত হচ্ছেন?
সন্তানেরা বৃদ্ধ মাকে রাস্তাঘাটে, বিলে, জঙ্গলে, কবরস্থানে, স্টেশনে কিংবা বৃদ্ধনিবাসে ফেলে গেছেন—এ ধরনের খবর এখন আর আমাদের শিউরে তোলে না। বিষয়টা অনেক গা সওয়া হয়ে গেছে। সম্প্রতি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মুসল্লি ইউনিয়নের নির্জন ভারুয়া বিলে ৮৮ বছরের বৃদ্ধা বেগম খাতুনকে চোখ–মুখ ঢেকে রেখে যান তাঁর ছেলে। যাওয়ার সময় ছেলেরা বলে গিয়েছিলেন, একটু পরে এসে নিয়ে যাবেন। কিন্তু পরে আর সেই সন্তান আসেননি। তিন দিন পড়ে ছিলেন তিনি।
পরে অবশ্য পুলিশ আঙুলের ছাপ মিলিয়ে ওই বৃদ্ধা বেগম খাতুনের পরিবারকে শনাক্ত করে। জামালপুরের বকশীগঞ্জের পাগলাপাড়ায় বসবাসরত পরিবারের সদস্যদের পুলিশ বিষয়টি জানায়। ২১ মে দুই সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা এসে তাঁকে নিয়ে যান। দুই সন্তান দাবি করেছেন, গত মার্চে তিনি নিখোঁজ হয়েছিলেন। তাঁর খোঁজে এলাকায় তাঁরা মাইকিংও করান। শেষ পর্যন্ত না পেয়ে গত ২১ এপ্রিল বকশীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ভারুয়া বিলটি বেশ নির্জন। ওই বিলে লোকজনের যাতায়াত অনেক কম। তা ছাড়া কয়েক দিন বৃষ্টি হওয়ায় বিলে মানুষের যাতায়াত একেবারেই ছিল না। ভাগ্যিস, কাছের এক গ্রামের তরুণ হাঁসের খামারি ফারুকের হাঁস হারিয়ে গিয়েছিল। হাঁস খুঁজতে বিলে গিয়ে তিনি একটি উঁচু মাটির টিলায় ঝোপের মধ্যে এই প্রবীণাকে দেখতে পান।
নড়াচড়া নেই, মশা-মাছি ও বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ তাঁর আশপাশে ঘিরে ধরেছে। ফারুক কাছে গিয়ে দেখতে পান, বৃদ্ধা অস্পষ্টভাবে শব্দ করছেন। ফারুক প্রতিবেশী রুবেলকে ডেকে এনে সেখান থেকেই ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। আঙুলের ছাপ মিলিয়ে তাঁর পরিচয় জানা যায়।
বৃদ্ধা বেগম খাতুন কীভাবে নির্জন বিলে গেলেন, সে বিষয়ে প্রথমে কিছু জানা গেল না। বৃদ্ধা নিজেও এ নিয়ে কিছু বলেননি। এ ঘটনা বিশ্বাস করতে পারেননি নান্দাইল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রুবেল মিয়া। তিনি বলেছেন, ‘এই নির্মমতা আমাকে অবাক করে দিয়েছে।’