বিদ্যুৎ চাহিদার ভুল প্রাক্কলনের বিপদ
বর্তমান সরকারের অত্যন্ত প্রশংসনীয় অর্জনের অন্যতম হলো, দেশের শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা। কিন্তু চাহিদার ভুল প্রাক্কলনের ফলে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সরকারের এ সাফল্য ম্লান করে দিচ্ছে। কারণ বছরের একটা উল্লেখযোগ্য সময় চাহিদা না থাকায় বহু বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে বসিয়ে রাখতে হচ্ছে, যদিও চুক্তি অনুসারে এগুলোর মালিকের বিপুল অংকের ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। উপরন্তু এ দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন যেহেতু এক দশক ধরে আমদানি করা এলএনজি ও কয়লার ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল; রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জ্বালানি তেল, এলএনজি ও কয়লার আন্তর্জাতিক বাজারে সৃষ্ট মারাত্মক মূল্যস্ফীতি এবং জোগান সংকটের কারণেও বহু বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসে থাকছে। আর এগুলোর পেছনে ব্যয়কৃত ক্যাপাসিটি চার্জ দেশের অর্থনীতিতেও সংকট ডেকে আনছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিএনপি-জামায়াত সরকারের (২০০১-০৬) অকল্পনীয় ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠার জন্য ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার অব্যবহিত পর মহাজোট সরকার বেসরকারি খাতের সহযোগিতায় ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলনির্ভর রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ গ্রহণ করেছিল। অবশ্য তখনকার বাস্তবতায় অযৌক্তিক না হলেও; এগুলো হওয়ার কথা ছিল স্বল্পমেয়াদি জরুরি ব্যবস্থা।
বিএনপি-জামায়াত সরকার ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের রেখে যাওয়া ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াটে নামিয়ে ফেলেছিল। ২০০১-০৬ মেয়াদে শুধু টঙ্গীতে ৮০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার একটি ‘পিকিং প্লান্ট’ নির্মিত হয়েছিল। আর ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সম্প্রসারণের অজুহাতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শুধু বিদ্যুতের খাম্বা স্থাপনের ‘লুটপাট যজ্ঞ’ চলেছিল। ২০০৭-০৮ সালের ‘ওয়ান ইলেভেন’ সরকারও বোধগম্য কারণে ভালো সমাধান দিয়ে যেতে পারেনি। ফলে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় বিদ্যুতের লোডশেডিং অসহনীয় মাত্রায় ছিল। এমনকি শিল্প খাতসহ পুরো অর্থনীতিতে তখন বিদ্যুতের এই মহাসংকট বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে আশঙ্কা ছিল।