বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদকপ্রাপ্তির তাৎপর্য
আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জুলিও কুরি পদকপ্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি হলো। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব মজলুম, মুক্তি ও শান্তিকামী মানুষের জন্য এই দিনটি চিরস্মরণীয়। পুঁজিবাদ আর যুদ্ধবাজদের দখলে চলে যাওয়া পৃথিবীর অসহায় মানুষের মুক্তির পথ অনুসন্ধানের রোমাঞ্চকর যাত্রায় অনুপ্রেরণা দিতে দিনটি আমাদের সামনে এসেছে। তাই সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সাম্যবাদী সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিজের জীবন-যৌবন মানুষের জন্য বিলিয়ে দেওয়া বঙ্গবন্ধু ও জুলিও কুরি পদকের ইতিহাস পাঠ আমাদের জন্য আবশ্যক।
অত্যাচারী পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ভয়ানক নির্যাতন ও নিষ্পেষণ থেকে সাড়ে সাত কোটি বাঙালির মুক্তিদাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ১৯৭২ সালের ১০ অক্টোবর চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোতে বিশ্ব শান্তি পরিষদের প্রেসিডেন্সিয়াল কমিটির সভায় জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রদানের জন্য শান্তি পরিষদের মহাসচিব রমেশচন্দ্র প্রস্তাব উত্থাপন করেন। পৃথিবীর ১৪০টি দেশের শান্তি পরিষদের ২০০ প্রতিনিধির উপস্থিতিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর পর ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত এশীয় শান্তি সম্মেলনের এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পরিষদের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল রমেশচন্দ্র বঙ্গবন্ধুর হাতে ‘জুলিও কুরি’ পদক তুলে দেন। স্বাধীন বাংলাদেশে কোনো রাষ্ট্রনেতার এটিই ছিল প্রথম আন্তর্জাতিক পদক লাভ। বিশ্ব শান্তি পরিষদ প্রদত্ত জুলিও কুরি পদক বর্তমান আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং গভীর তাৎপর্য বহন করে।
মানবতাবাদী ও শান্তিবাদী ফরাসি পদার্থবিজ্ঞানী জঁ ফ্রেডেরিক জুলিও কুরি ১৯৫৮ সালে মৃত্যুবরণ করলে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ১৯৫৯ সালে তাদের শান্তি পদকের নাম রাখে ‘জুলিও কুরি’। সেই থেকে বিশ্বপরিসরে বিশেষত প্রগতিশীল মানুষের কাছে অত্যন্ত মর্যাদাকর পদকটি ‘জুলিও কুরি’ নামে পরিচিত হয়ে আসছে। ফ্রেডেরিকের মূল নাম জঁ ফ্রেডেরিক জুলিও। বিখ্যাত নোবেল বিজয়ী দম্পতি পিয়েরে কুরি ও মারি কুরির কন্যা ইরেন কুরিকে বিয়ে করার পর তাঁর নাম হয়ে যায় জঁ ফ্রেডেরিক জুলিও কুরি। কারণ বিয়ের পর দু’জন একে অপরের পদবি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। সে হিসেবে ইরেনের নাম হয়ে যায় ইরেন জুলিও কুরি। ১৯৩৫ সালে তাঁরা যৌথভাবে রসায়নে নোবেল পুরস্কার পান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান দখলদারিত্ব থেকে ফ্রান্সকে মুক্ত করার যুদ্ধে অস্ত্র হাতে অংশগ্রহণকারী ফ্রেডেরিক ১৯৫১ সালে বিশ্ব শান্তি পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হন। অন্যদিকে ১৯৫০ সাল থেকে সংগঠনটি ফ্যাসিবাদবিরোধী ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রাম, মানবতার কল্যাণ এবং শান্তির পক্ষে বিশেষ অবদানের জন্য বরণীয় ব্যক্তি ও সংগঠনকে শান্তি পদকে ভূষিত করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বিশ্বাসী বাংলাদেশের নির্মাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জুলিও কুরি শান্তি পদকে ভূষিত করা হয়।