ভিয়েনা কনভেনশন সবার জন্য সমান
বাংলাদেশে নিযুক্ত কয়েকজন বিদেশি কূটনীতিকের প্রটোকল-বিষয়ক আলোচনায় সম্প্রতি আমাদের সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যম বেশ মুখর হয়ে উঠেছে। এর সূত্রপাত ঘটে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনারদের ‘অতিরিক্ত নিরাপত্তা’ প্রত্যাহার করার খবরটি প্রকাশ পেলে। পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষে বলা হয়েছে, যেসব রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনার বাইরে চলাচলের সময় অতিরিক্ত পুলিশি নিরাপত্তা বা এসকর্ট সুবিধা পেয়ে থাকেন, তাঁরা আর এই সুবিধা পাবেন না।
শুরুতেই কয়েকটি প্রশ্নোত্তর খেয়াল রাখতে হবে। যেমন কোন কোন দেশ এতদিন প্রটোকল সুবিধা পেত? বাংলাদেশে অনেক দেশের দূতাবাস রয়েছে। তার মধ্য থেকে কেবল এই ক’টি দেশই এতদিন বাড়তি প্রটোকল সুবিধা পেয়ে আসছিল। এখন যে ছয়টি দেশের প্রটোকল প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে, তারা ছাড়া আর কোনো দেশ এই বাড়তি প্রটোকল পেত না।
কোন বিশেষ কারণে তারা এটা পেয়ে আসছিল? এই কয়টি দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আমাদের দেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক– এসব বিষয় বিবেচনায় এনে এই ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। আবার এইসব দেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবেও কিছু ঘটনা ঘটেছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের নিরাপত্তা জোরদার করার বিষয়টি সামনে এসেছিল। তার মানে অন্য মিশনগুলো যে প্রটোকল পেত না বা নিরাপত্তা পেত না তা কিন্তু নয়।
২০১৬ সালে ঢাকায় হলি আর্টিসান জঙ্গি হামলার ঘটনার পর থেকেই বেশ কিছু রাষ্ট্রদূতের উদ্বেগ ও চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বাড়তি কিছু লোকবল দেওয়া হয়েছিল। তখন আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এক ধরনের জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হয়েছিল। বাংলাদেশ দ্রুতই জঙ্গি দমনে তার সুফল পেয়েছিল। এ ছাড়া ২০০৪ সালে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের তৎকালীন হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর সিলেটে গ্রেনেড হামলার পর থেকে তাঁকে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্যের অন্য হাইকমিশনাররাও এই নিরাপত্তা সুবিধা পেয়ে আসছিলেন। যদিও আনোয়ার চৌধুরীকে হামলার ঘটনায় মুফতি হান্নানকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছিল। দ্রুত সময়ের মধ্যেই তার বিচারকাজ সম্পন্ন হয়েছিল। সেই ঘটনায় তৎকালীন ব্রিটিশ মুখপাত্র দ্রুত সময়ে বিচার চালু করার ঘটনায় সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছিলেন। তবে মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর করার বিষয়ে তাঁর আপত্তির কথা জানিয়েছিলেন। সেটি ছিল তাঁদের নিজস্ব বিচারপদ্ধতির জন্য। যেহেতু সেখানে বিচারের জন্য ফাঁসিতে মৃত্যুদণ্ড বিধানের ব্যবস্থা নেই, তাই তাঁরা সেই প্রক্রিয়ার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। মুফতি হান্নানের বিরুদ্ধে অবশ্য বেশ কিছু মামলা ছিল।
এখন কেন অতিরিক্ত নিরাপত্তা প্রত্যাহার করা হচ্ছে? ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতদের বাড়তি নিরাপত্তা সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন বাংলাদেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যথেষ্ট ভালো। কূটনীতিকদের বাড়তি নিরাপত্তা সুবিধা দিলে বিদেশিদের কাছে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা নিয়ে ভুল বার্তা যায়। তাই বাংলাদেশ কোনো ভুল বার্তা দিতে চায় না। এ ছাড়া কয়েকটি দেশকে বিশেষ নিরাপত্তা সুবিধা দেওয়ায় অন্যান্য দেশও তা চাইছিল। সে কারণে এভাবে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া অব্যাহত রাখা আর সম্ভব হচ্ছে না।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বিদেশি কূটনীতিক
- প্রটোকল