 
                    
                    ব্যবসায়ীদের লোভ মুনাফাস্ফীতিকে উসকে দিচ্ছে
গোলাম রহমান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি। পেশাদার কর্মজীবনে ছিলেন বাণিজ্যসচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব। তিনি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এবং পরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ছিলেন। সম্প্রতি ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ ও চিনির দাম বৃদ্ধির কারণ ও প্রতিকার এবং ভোক্তা অধিকার আইন নিয়ে কথা বলেছেন।
সরবরাহে ঘাটতি নেই, আন্তর্জাতিক বাজারেও দাম বাড়েনি। তারপরও সম্প্রতি ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ ও চিনির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, কারণ কী?
গোলাম রহমান: অর্থনীতির সূত্রমতে, সরবরাহ এবং চাহিদার ভিত্তিতে পণ্যমূল্যের দাম নির্ধারিত হয়। কোনো পণ্যের সরবরাহ কম থাকলে অথবা চাহিদা অধিক হলে দাম বাড়ে। আবার উৎপাদন ব্যয় অধিক অথবা আমদানিমূল্য বৃদ্ধি পেলে তার বিরূপ প্রভাব পণ্যমূল্যে পড়ে। তা ছাড়া কোনো পণ্যের সরবরাহ যদি এক বা হাতে গোনা কয়েকজন ব্যবসায়ীর হাতে থাকে, সে ক্ষেত্রে সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে তাদের পক্ষে মূল্য বৃদ্ধি ও অতিমুনাফা অর্জন সম্ভব। অধিক হারে আমদানি শুল্ক, ভ্যাট বা অন্য কোনো করারোপের কারণেও মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে। আমদানিনির্ভর পণ্যের ক্ষেত্রে টাকা-ডলারের বিনিময় হার মূল্য নির্ধারণে বিশেষ প্রভাব ফেলে।
চিনি, ভোজ্যতেলসহ বিবিধ আমদানি করা পণ্যের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন। এক বছর বা তার কিছু বেশি সময়ে ডলারের মূল্য ৮৪-৮৫ থেকে ১০৫-১১০ টাকায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে পণ্যের আমদানি মূল্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। রোজা উপলক্ষে সরকার ভোজ্যতেল ও চিনির ওপর আরোপিত কর-ভ্যাট আরোপের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দিয়েছিল এবং এখন তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। করছাড় প্রত্যাহারের অজুহাতে সরবরাহকারী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মতি নিয়ে চিনি ও ভোজ্যতেলের মূল্য উল্লেখযোগ্য হারে বাড়িয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমেছে। কিন্তু দেশের বাজারে তার প্রভাব দেখছি না। বছর দুই-তিন আগে সয়াবিন তেলের প্রতি টনের দাম ছিল ৮৫০ ডলার বা কাছাকাছি, এখন কমবেশি ১ হাজার ১৫০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। ডলারের বিনিময় হার বিবেচনায় নিয়ে আগে প্রতি কেজির আমদানি মূল্য ছিল ৭০-৭৫ টাকা আর এখন ১১০-১১৫ টাকা। সে সময়ে দেশে ভোজ্যতেলের খুচরা বিক্রয়মূল্য ছিল ১১০ টাকা আর এখন ১৯৯ টাকা। আমদানি ও বিক্রয়মূল্যের পার্থক্য কেজিপ্রতি ৪০-৪৫ থেকে ৭০-৮০ টাকায় উন্নীত হয়েছে। স্পষ্টতই ব্যবসায়ীদের অধিক মুনাফা অর্জনের প্রবণতা থেকেও মাত্রাতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধি পেতে পারে।ব্যবসায়ীদের লোভস্ফীতি মুনাফাস্ফীতিকে উসকে দিচ্ছে।
চিনির ক্ষেত্রে আমদানি মূল্য বৃদ্ধি এবং অতিমুনাফা অর্জনের প্রবণতা দেশের বাজারে মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ। কৃষকপর্যায়ে যুক্তিসংগত মূল্য নিশ্চিত করা এবং দেশে উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে সরকারের ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীদের অতিমুনাফা অর্জনের প্রবণতা থেকে সম্প্রতি পেঁয়াজের দাম হু হু করে বাড়ছে বলে অনেকেরই ধারণা।
- ট্যাগ:
- মতামত
- মূল্যস্ফীতি
- আমদানি পন্য
 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                -68f7ebaa39de2-6903ee942e8e5.jpg)