মৃণালের সিনেমায় জীবনের নানামুখী সংকট
বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র নির্মাণ করেই বিশ্বব্যাপী কিংবদন্তী হয়ে আছেন পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও লেখক মৃণাল সেন। সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটকের পর মৃণাল সেনই এমন একজন পরিচালক যার হাত ধরে ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে এক নতুন ধারার প্রবর্তন হয়েছিল।
১৯৫৫ সালে ‘রাত ভোর’ ছবির মাধ্যমে পরিচালনা শুরু করেন মৃণাল সেন। তার পরের ছবি ছিল ‘নীল আকাশের নীচে’। ‘বাইশে শ্রাবণ’ এবং ‘ভুবন সোম’ ছবির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিচিতি পান তিনি। ২৮টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও ৪টি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন মৃণাল সেন।
ছবিতে নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংগ্রাম ফুটিয়ে তুলতেন মৃণাল। মানুষের জীবনের নানামুখী সংকটগুলো সিনেমায় দেখাতেন তিনি। সবসময় সিনেমার অর্থ খুঁজে বেড়াতেন মৃণাল সেন।
১৯২৩ সালের ১৪ মে বাংলাদেশের ফরিদপুরে জন্ম নেয়া খ্যাতিমান এই পরিচালকের জন্ম শতবর্ষ রবিবার (১৪ মে)। বিশেষ এই দিনে জেনে নিন মৃণাল সেনের কালজয়ী কিছু সিনেমা সম্পর্কে:
পদাতিক (১৯৭৩): এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন অভিনেতা ধৃতিমান চ্যাটার্জি। এটি মৃণাল সেনের কলকাতা ত্রয়ীর তৃতীয় ছবি। ৭০ এর দশকের প্রথমদিকের কলকাতার চিত্র দেখা যায় এই সিনেমাতে। ছবির গল্পে একজন রাজনৈতিক এক্টিভিস্ট ক্রমাগত তার দলের নেতাদের কথায় নীতি বিরুদ্ধ কাজ করতে বাধ্য হয়। পরে সে তার ভুল বুঝতে পারে। ঘটনা প্রবাহে সে একজন ডিভোর্সি মহিলার এপার্টমেন্টে আশ্রয় নেয়। পরে সে দলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়।
কলকাতা ৭১ (১৯৭২): কলকাতা ৭১ চলচ্চিত্রটি চারটি আলাদা আলাদা গল্পের সমষ্টি। সমরেশ বসু, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রবোধ শ্যান্যাল ও মৃণাল সেনের গল্পের উপর ভিত্তি করে ছবিটি নির্মাণ করা হয়। কলকাতা ৭১ চলচ্চিত্রে উৎপল দত্ত মাধবী মুখার্জি অভিনয় করেছিলেন।
ইন্টারভিউ (১৯৭০): মৃণাল সেনের কলকাতা ত্রয়ীর প্রথম ছবি ইন্টারভিউ। চলচ্চিত্রটিতে রঞ্জিত মল্লিক ও করুণা ব্যানার্জি অভিনয় করেছিলেন। ছবির গল্পে রঞ্জিত মল্লিক একজন শিক্ষিত যুবক। একটি ছোট প্রেসে কাজ করে। তার বাড়িতে দিদি ও মা আছেন। তাদের একজন পারিবারিক বন্ধু একটি বিলাতি কোম্পানিতে চাকরি করে। সেখানে রঞ্জিতকেও চাকরি দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। শর্ত দেয়া হয় চাকরির জন্য রঞ্জিতকে বিলাতি কায়দায় কোট প্যান্ট পরে ইন্টারভিউতে উপস্থিত হতে হবে। কিন্তু ভাগ্য বিড়ম্বনায় কোট-প্যান্ট জোগাড় করার পরেও হারিয়ে ফেলায় সেই ইন্টারভিউতে কোট প্যান্ট পরে যেতে পারেনি রঞ্জিত। বাধ্য হয়ে বাঙালি ঐতিহ্যবাহী ধুতি পাঞ্জাবী পরে যায় এবং তার চাকরি হয় না।