
চিরতারুণ্যে ভরপুর
জগৎ-সংসারে এমন কিছু মানুষ থাকেন, যাঁদের সান্নিধ্য গর্বের হয়। তাঁদের আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব পরিশীলিত জীবন গড়তে অনুপ্রাণিত করে এবং তাঁদের অবিস্মরণীয় কর্ম ও দুঃসাহসী জীবনাচার সাহসী হওয়ার শক্তি জোগায়। পরম শ্রদ্ধেয় শওকত ওসমান আমার কাছে তেমন একজন ব্যক্তিত্ব। তাঁর ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শত স্মৃতির কথা মনে পড়ছে। তাঁরই একটি ছোট্ট বয়ান।
ষাট দশকের মাঝামাঝিতে যখন আর্ট কলেজে লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হলাম, তখন থেকে তাঁর সঙ্গে সরাসরি পরিচয়। পরিচিতির সূত্র তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র বন্ধুবর বুলবন ওসমান।
পিতার পদাঙ্ক অনুসারী (সাহিত্যচর্চা, শিক্ষকতা ইত্যাদি) বুলবন আর্ট কলেজে আমার সহকর্মী হয়ে আসার পর ৭ মোমেনবাগের বাসায় আসা-যাওয়া করতে করতে তাঁদের পুরো পরিবারের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ হয়ে যাই। সেই সুবাদে মিলেছে এই বিশাল ব্যক্তিত্বকে কাছ থেকে দেখার এবং যাচাইয়ের সুযোগও। সেই থেকে শুরু করে তাঁর প্রয়াণ– যে দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতা, তা সংক্ষিপ্ত পরিসরে লেখা সম্ভব নয়। বিভিন্ন দিকে এবং বিষয়ে ছিল তাঁর অগাধ জ্ঞান। নিজের প্রধান দিক সৃষ্টিশীল সাহিত্যচর্চা তো ছিলই, পাশাপাশি রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তাঁর প্রগতিশীল ও সাহসী ভূমিকা ছিল সবার জন্য উজ্জীবক এবং অনুকরণীয়। নিজের মতাদর্শ থেকে সরেননি কখনও। মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, অপসংস্কৃতি ইত্যাদির বিরুদ্ধে তিনি আজীবন লড়াই করে গেছেন। সোচ্চার ছিলেন চিরকাল এসব নির্মূলের আন্দোলনে। তাঁর আধুনিক মনন, চিন্তা আর দর্শন-প্রজ্ঞাকে তিনি তাঁর লেখনীতে, বক্তব্যে; এমনকি দৈনন্দিন জীবনেও প্রয়োগ করে চলেছিলেন চিরকাল।
- ট্যাগ:
- মতামত
- স্মরণ
- শওকত ওসমান