এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ঢাকার বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডে সব দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এর ১১ দিনের মাথায় নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লেগে তিনতলার ২৫০টির মতো দোকান ভস্মীভূত হলো। ভাবা গিয়েছিল, সেটাই বোধ হয় নিষ্ঠুর এপ্রিলের শেষ আগুন হবে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিন দিন না পেরোতেই সোমবার সকালে আগুন লাগল উত্তরার বিজিবি মার্কেটে।
একটি মার্কেটের আগুনের রেশ কাটতে না কাটতেই আরেকটি মার্কেটে আগুন লাগার কী ব্যাখ্যা থাকতে পারে? যেকোনো মার্কেট বা স্থাপনা নির্মাণ করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি যেখানে সর্বাধিক গুরুত্ব পাওয়ার কথা, সেখানে এটাকেই সবচেয়ে বেশি অবহেলা করা হচ্ছে। আগুন লাগার কারণ নিয়ে যখন সরকার ও বিরোধী দলের নেতারা অহেতুক বিতর্ক ও পরস্পরকে দোষারোপ করছেন, তখনই অগ্নিনির্বাপণ বিভাগ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে ঢাকার মার্কেটগুলো কতটা ঝুঁকিপূর্ণ।
অগ্নিনির্বাপণ বা ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে রাজধানীর ৫৮টি বিপণিবিতান পরিদর্শন করে তাঁরা দেখতে পান সব কটিই ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে ৯টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ, ৩৫টি ঝুঁকিপূর্ণ, ১৪টি মাঝারি মাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ। ২০১৯ সালের হিসাবে অগ্নিনির্বাপণ বিভাগ ঢাকার ১ হাজার ৪৮টি বিপণিবিতানকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিল; যার মধ্যে ৪২৮টি ছিল অতি ঝুঁকিপূর্ণ। চলতি মাসে পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজার ও নিউ সুপার মার্কেট অতি ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় ছিল।
আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, অগ্নিনির্বাপণ বিভাগ যেসব মার্কেটকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে, সেগুলোকে ঝুঁকিমুক্ত করতে গত চার বছরে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অগ্নিনির্বাপণ বিভাগ ঝুঁকিমুক্ত করার অনুরোধ বা সুপারিশই করতে পারে। কোনো মার্কেট তারা বন্ধ করতে পারে না। রাজউক ও সিটি করপোরেশনের আইনকানুন মেনে এসব মার্কেট বা স্থাপনা করার বিধান থাকলেও অনেকেই তা মানছেন না। সিটি করপোরেশনও এ অনিয়মের কথা স্বীকার করেছে।
কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অভিযোগ আছে, সিটি করপোরেশনের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই মার্কেট কমিটির নেতারা নকশাবহির্ভূত স্থাপনা করে থাকেন। অগ্নিনির্বাপণ বিভাগ কেবল আগুনের ঝুঁকি চিহ্নিত করেছে। ঝুঁকি আছে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইনেও। মাসখানেক আগে ত্রুটিপূর্ণ গ্যাসের লাইন থেকেই সিদ্দিকবাজারের একটি ভবনে বিস্ফোরণ ঘটেছিল।
- ট্যাগ:
- মতামত
- অগ্নি নির্বাপন