
রক্তক্ষরণজনিত রোগ হিমোফিলিয়া
হিমোফিলিয়া একটি রক্তক্ষরণজনিত জন্মগত রোগ, যা বংশানুক্রমে ছেলেদের হয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবে শরীরের কোনো জায়গায় আঘাত পেলে বা সামান্য কেটে গেলে ওই স্থান থেকে যে রক্তক্ষরণ হয়, তা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু হিমোফিলিয়া রোগীর ক্ষেত্রে সহজে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয় না অথবা বিলম্বিত হয়।
সাধারণত মেয়েরা হিমোফিলিয়ার রোগী হয় না, রোগের বাহক হয়। তবে দুয়েকটি ক্ষেত্রে মেয়েরাও আক্রান্ত হতে পারে। হিমোফিলিয়ার রোগীর সঙ্গে আত্মীয়ের (মামাতো, খালাতো বোনের) বিয়ে হলে ছেলে ও মেয়ে উভয়েরই এ রোগ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
লক্ষণ
ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর নাভি থেকে রক্ত পড়া, যখন হামাগুড়ি দিতে শেখে, তখন আপনাআপনি হাঁটু, কনুই, পায়ের গোড়ালি ফুলে যাওয়া, খেলাধুলার সময় সামান্য আঘাতে মাংসপেশিতে কালো কালো দাগ পড়া, গিরা ফুলে যাওয়া। দাঁত পড়ার সময় অতিরিক্ত রক্ত পড়া, খতনা করার সময় প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়া ইত্যাদি।
বংশানুক্রমে যেভাবে হয়
● যদি বাবা সুস্থ ও মা বাহক হন, তবে ছেলেসন্তানের রোগী হওয়ার সম্ভাবনা ৫০% আর মেয়েসন্তানের বাহক হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ %।
● যদি বাবা রোগী ও মা সুস্থ হন, তবে সব ছেলেসন্তানই সুস্থ হবে এবং সব মেয়েসন্তানই বাহক হবে। সুতরাং প্রত্যেক হিমোফিলিয়া পুরুষ রোগী বিয়ে করতে পারবেন, তবে সন্তান নেওয়ার সময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের/রক্তরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
● যদি বাবা রোগী ও মা বাহক হন, তবে ছেলেসন্তানের রোগী হওয়ার সম্ভাবনা ৫০% আর মেয়েসন্তানের রোগী হওয়ার সম্ভাবনা ২৫%, বাহক হওয়ার সম্ভাবনা ২৫%।
প্রতিরোধ কীভাবে
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের জেনেটিক টেস্টিং, জেনেটিক কাউন্সেলিং ও প্রিনাটাল টেস্ট করে অনাগত সন্তান রোগী না বাহক, তা নিশ্চিত হয়ে হিমোফিলিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা কমানো যায়।
নিষেধ
● আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা আছে, এমন খেলাধুলা নিষেধ। মাংসে ইনজেকশন দেওয়া নিষেধ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধান ছাড়া কোনো ধরনের অস্ত্রোপচার করা যাবে না।
চিকিৎসা
হিমোফিলিয়া পুরোপুরি সারানোর চিকিৎসা নেই। তবে কিছু ইনজেকশনসহ আরও কিছু ব্যবস্থা আছে। তবে এ রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাই সচেতনতার মাধ্যমে প্রতিরোধ করাই উত্তম।