সূর্য ওঠার আগেই ঘুম থেকে ওঠে ছোট ছোট মেয়েরা। তারপর জার্সি আর বুট পরে কিংবা খালি পায়ে মাঠে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়। অনেকটা পথ হেঁটে কিংবা সাইকেলে করে উপস্থিত হয় বিদ্যালয়ের মাঠে। শুরু করে ফুটবল অনুশীলন। এ অনুশীলন তাদের প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে দেশের সেরা ফুটবল দলের স্বীকৃতি এনে দিয়েছে। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপের চ্যাম্পিয়ন তারা। পড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
গত ২১ মার্চ ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের নলমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ২-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় খুদে মেয়েদের দলটি। তবে এ বিদ্যালয়ের মেয়েদের ফুটবল খেলার শুরুটা মোটেও সহজ ছিল না। অধিকাংশরাই নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। কারও বাবা দিনমজুর, কারও বাবা রিকশাচালক, কেউ কৃষিকাজ করেন, কেউবা মাছ বিক্রি করেন।
আর্থিক অসচ্ছলতার পাশাপাশি আছে—‘মেয়েরা হাফপ্যান্ট পরে খেলবে’, স্বজন ও প্রতিবেশীদের এমন নানা নেতিবাচক মন্তব্য। তবে কিছুই তাদের দমাতে পারেনি। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য সব বাধা উপেক্ষা করে নিজেদের কাজটা করে গেছে এ বিদ্যালয়ের ফুটবল দলের মেয়েরা।
২০১১ সাল থেকে বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু হয়। তখন থেকে বাঞ্ছারামপুরের মেয়েরা এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। ধীরে ধীরে তারা শীর্ষস্থানে এসেছে। সাবেক তিন ছাত্রী অনূর্ধ্ব-১৫ মহিলা জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে খেলছে।
শুরুর কথা
বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ শুরুর সময় থেকে বাঞ্ছারামপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেয়েদের ফুটবল খেলা শুরু। এর মধ্যে তিনবার জেলায় ও দুবার বিভাগীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয় মেয়েদের দল। ২০১৬ সালে জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর তারা ফুটবল অনুশীলনে নিয়মিত হতে থাকে। তখন থেকে বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ শুরুর আগে তিন থেকে চার মাস নিয়মিত ফুটবল অনুশীলন করত এই মেয়েরা। ২০১৮ (২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত) জাতীয় পর্যায়ে সেমিফাইনালে ময়মনসিংহের কলসিন্দুরের মেয়েদের চ্যাম্পিয়ন দলের সঙ্গে পরাজিত হয় তারা। ধীরে ধীরে অবস্থার পরিবর্তন হয়, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য তাদের স্বপ্নরা ডানা মেলতে শুরু করে।
ফুটবলের প্রতি মেয়েদের আগ্রহকে ধরে রাখতে বাঞ্ছারামপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মীর রফিকুল ইসলাম ২০১৯ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্যের নামে ‘ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম ফুটবল ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকে মেয়েরা নিয়মিত ফুটবল অনুশীলন করে যাচ্ছে। এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই ক্লাবের বর্তমান সদস্য। শুরুর দিকে সদস্যসংখ্যা ছিল ৬৫। বর্তমানে সদস্যসংখ্যা ৪৫।