নার্সিংয়ে ‘সরাসরি’ শিক্ষক নিয়োগের তাগাদা, ‘অভিজ্ঞদের’ কী হবে?
“পিএইচডি করে আমার কী লাভ হল তাহলে? আমি শুধু নার্সিংই করে যেতাম। নতুন নিয়ম হলে আমার তো আর প্রভাষক হওয়া হবে না। আমি তো উচ্চশিক্ষা নিলাম ইনস্ট্রাক্টর থেকে শিক্ষক হব বলে। নতুন যে নিয়ম করার চেষ্টা হচ্ছে, তাতে দেখা যাবে- আমি যাদের পড়াচ্ছি, তারা প্রভাষক হবে, আর আমি তাদের নিচে পড়ে থাকব। আমার আর প্রমোশন হবে না।”
আক্ষেপ করে বলছিলেন ঢাকা নার্সিং কলেজের এক ইনস্ট্রাকটর। সরকারি চাকরি করেন বলে নাম পরিচয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করতে চাইলেন না। জানালেন, নার্সিংয়ে চার বছরের ডিপ্লোমা করে এ পেশায় এসেছিলেন তিনি। পরে দুই বছরে বিএসসি এবং আরও দুই বছরে মাস্টার্স করেন। নার্সিং কলেজের প্রভাষক নিয়োগে অগ্রাধিকার পেতে থাইল্যান্ড থেকে করেছেন পিএইচডি, লেগেছে প্রায় পাঁচ বছর।
কর্মজীবনে এসে ৯ বছর পড়াশোনা করার পর যখন স্বপ্ন পূরণের কাছকাছি বলে ভাবছেন এই ইনস্ট্রাক্টর, ঠিক তখনই তার কপালে ভাঁজ পড়েছে পদোন্নতির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধের ‘উদ্যোগের’ খবর শুনে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নার্সিং শাখার ২০১৬ সালের নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী নার্সিংয়ে সরাসরি প্রভাষক হওয়ার সুযোগ নেই। নবম গ্রেডে শিক্ষকতা করতে সিনিয়র স্টাফ নার্স/স্টাফ নার্স বা পাবলিক হেলথ নার্স পদে ন্যূনতম ৫ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সেই সঙ্গে পাবলিক হেলথ নার্সিং বা নার্সিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে।
এই বিধিমালা অনুযায়ী সব যোগ্যতাই আছে আক্ষেপ করা পিএইচডিধারী সেই নার্সের। কিন্তু তার স্বপ্নে ভয় ধরাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কিছু নথি, যাতে নার্সিংয়ে সরাসরি প্রভাষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিতে বলা হচ্ছে।
কী সেই নথি
২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন অনুবিভাগ থেকে সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ স্বাক্ষরিত এক পত্রে ঢাকার শের-ই-বাংলা নার্সিং কলেজ ও মানিকগঞ্জ নার্সিং কলেজের জন্য ১৮৮টি পদের বেতন গ্রেড নির্ধারণে সম্মতি দেওয়া হয়। সেখানে ইংরেজি, কম্পিউটার বিভাগের পাশাপাশি নার্সিংয়েও প্রভাষক পদে সরাসরি নিয়োগের কথা বলা হয়।
কিন্তু ২০১৬ সালের নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী ইংরেজি ও কম্পিউটার বিষয়ে সরাসরি নিয়োগের বিধান থাকলেও নার্সিংসহ বেশ কিছু পদ যে পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ হওয়ার কথা- তা অর্থ মন্ত্রণালয়কে স্মরণ করিয়ে দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের উপসচিব শামছুল আলম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বিষয়টি সংশোধনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়।
এক বছর বাদে ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হায়াত মো. ফিরোজ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগকে জানানো হয়, সিনিয়র স্টাফ নার্স ও সমমানের পদে কর্মরতদের পদোন্নতির মাধ্যমে প্রভাষক (নার্সিং) হিসেবে নিয়োগের সুযোগ নেই।