সোনা নেই আরাভের ইগলে, পুরোই লোহা
পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যা মামলার পলাতক আসামি আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলামের দুবাইয়ের স্বর্ণের দোকানে থাকা ইগলে একটুও সোনা নেই। লোহা দিয়ে তৈরি করে তাতে সোনার রং করা হয়েছে। আর ইগলটি যে দোকানে রেখে ছবি তোলা হয়, সেটিও আরাভ জুয়েলার্স নয়, তাঁর বন্ধু রাসেলের দোকান। সেখানে রেখে ছবি তোলার পর টেলিভিশনে কর্মরত তাঁর পরিচিত এক প্রবাসী সাংবাদিকের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে ‘৬০ কেজি সোনা দিয়ে তৈরি ইগলে খরচ প্রায় ৪২ কোটি টাকা’—এমন তথ্য ছড়িয়ে দেন আরাভ। মূলত আলোচনায় থাকতে এ কাজটি করেন তিনি।
দুবাইয়ে আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানে এমন তথ্য উঠে এসেছে। জানা যায়, ১৫ মার্চ রাসেলের দোকানে রেখে ছবি তোলার পর চারজনে ধরাধরি করে ইগলটি নিউ গোল্ড সুক এলাকার ৫ নম্বর ভবনে আরাভের দোকানের সামনে রাখেন। ওই চারজন হলেন শরীফ শাহ, সাকিব, রাফসান ও শাহেদ। আরাভের খালি দোকান খুলে রাখা হয়, মানুষ যাতে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে পারে। দোকানটিতে কোনো সোনা নেই।
দেশ-বিদেশে বাংলাদেশিদের মধ্যে আলোচনার জন্ম দেওয়া আরাভ জুয়েলার্সে ঢুকে ১৯ মার্চ সকালে ইগলটি ধরে দেখার সুযোগ হয়। এর সামনের অংশে কিছুটা ফিনিশিং থাকলেও বাকি অংশ দেখে ফাঁকির বিষয়টি সহজেই বোঝা যায়। বেলা পৌনে চারটার দিকে আরাভ এসে দোকানের সামনে সিঁড়িতে বসে মোবাইলে কথা বলার সময় এই প্রতিবেদক পাশে বসেন। নানা কথার ফাঁকে ইগলটি পুরোটা সোনার তৈরি কি না, জানতে চাইলে মুচকি হেসে তিনি বলেন, ‘আপনার কি কোনো সন্দেহ আছে? নকল হলে কি এটি নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনা হতো?’ এ সময় রিপন নামের একজন এসে ফরিদপুরের একজন প্রভাবশালী সংসদ সদস্য কথা বলবেন বলে আরাভকে ফোন ধরিয়ে দেন। তিনি ফোন কানে নিয়ে হেঁটে হেঁটে কথা বলতে থাকেন। আরাভের সঙ্গে আর কথা হয়নি।
সন্দেহ দূর না হওয়ায় আরাভ জুয়েলার্সের তত্ত্বাবধায়ক ইউসুফ ও শাহেদ আহমেদের সঙ্গে পরিচয় গোপন করে কথা হয়। তবে তাঁরা ইগল সম্পর্কে বেশি তথ্য দিতে পারেননি। পরদিন ২০ মার্চ বেলা ১১টা থেকে সেখানে গিয়ে কয়েকবার ইগলটি ধরে খুঁটিনাটি দেখার সুযোগ হয়। দুপুরে দোকানে আরাভের ব্যবসায়িক অংশীদার রাফসান জামির সঙ্গে ইগলের বিষয়ে কথা হয়। তিনি বলেন, আরাভের দুই বন্ধু রাসেল ও শরীফ শাহ ইগল তৈরির বিষয়ে বলতে পারবেন। শুরু হয় ওই দুজনের জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে তাঁরা আরাভ জুয়েলার্সে আসেননি। দেখা মেলে রাসেলের বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার ফেনীর ইব্রাহিমের। রাসেলের ফোন নম্বর চাইলে তিনি দেননি। তাড়া থাকার অজুহাতে চলে যাওয়ার সময় তিনি মনির নামের একজনের সঙ্গে কথা বলেন। মনিরের দ্বারস্থ হয়ে পাওয়া যায় রাসেলের মোবাইল নম্বর। ফোন করে স্বর্ণ ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে দেখা করার কথা বললে প্রথমে রাজি হননি। বলেন, আরাভ ইস্যুতে খুব চাপে আছেন। যা বলার ফোনে বলতে বলেন। পরে ব্যবসার আকার বড় জেনে দেখা করতে রাজি হন। প্রথমে হায়াত রিজেন্সি এলাকায় যেতে বললেও পরে রাত সাড়ে আটটার দিকে গোল্ড সুক এলাকার জয়ালুকাস জুয়েলার্সের মোড়ে রাসেলের দেখা মেলে। সঙ্গে আরও দুজন। পরিচয় পর্বে জানা গেল, লাল টি-শার্ট পরা ব্যক্তি শরীফ শাহ। কথা শুরু হয় সোনার ব্যবসা নিয়ে।
আরাভ প্রসঙ্গ উঠতেই শরীফ শাহ প্রকাশ করেন ইগল তৈরির কাহিনি। বলেন, তিনি মূলত শাকসবজি ও ফলমূলের ব্যবসা করেন। আরাভ খানের সঙ্গে বছর চারেক আগে তাঁর পরিচয়। বছরখানেক ধরে আরাভ সোনার ব্যবসায় যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। একপর্যায়ে ওই দোকান ভাড়া নেন। দোকানটি আলোচনায় আনতে আরাভের মাথা থেকেই ইগল দিয়ে লোগো আর পাখি তৈরির বুদ্ধি আসে। প্রথমে ৫০ কেজি ওজনের বানানোর কথা ছিল। সেখানে কেজি দেড়েক সোনা দেওয়ার কথা ছিল। পরে কোনো সোনা দেওয়া হয়নি। এটি তৈরির পর দোকানে আনার সময় দেখেন ওজন ১০০ কেজি হয়ে গেছে। কিন্তু ওজন কমানোরও সময় ছিল না। কারণ, সাকিবের (ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান) শিডিউল চলে এসেছে।
- ট্যাগ:
- বাংলাদেশ
- দোকান
- লোহা
- ঈগল
- রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ