হিসাব করে পানি পান
পাহাড়ের ঢালে বসবাস গৃহিণী সবিতা নকরেক (৩২) ও তাঁর পরিবারের। আধা কিলোমিটার দূরে সমতল থেকে প্রতিদিন সুপেয় পানি আনতে হয় তাঁর। ফলে সবিতাসহ পরিবারের সদস্যদের পানি পান করতে হয় হিসাব করে। শুধু সবিতার পরিবার নয়, শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ে বসবাসকারী পরিবারগুলোর সুপেয় পানির এমন হাহাকার বছরের পর বছরের।
জনপ্রতিনিধি ও পাহাড় এলাকায় বসবাসকারী লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের ঢালে কালাপনি ও বুরুঙ্গা গ্রামের ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীসহ ৪০টি পরিবারের ৩০০ মানুষের বসবাস। এই পরিবারগুলোর পানির উৎস হচ্ছে গ্রামের চারটি মাটির কূপ। বিশুদ্ধ পানির আর কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তাঁরা সারা বছর এই কূপের পানিতে খাওয়াসহ গৃহস্থালির কাজ সারেন।
কালাপনি গ্রামের সবিতা নকরেক বলেন, স্বামী রবি সাংমা, দুই ছেলে ও শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে ছয় সদস্যের সংসার। কূপের পানিতে গৃহস্থালির কাজ সারেন। কিন্তু পানের জন্য তাঁর পরিবারের দুই কলসি পানি লাগে। সকাল ও বিকেলে আধা কিলোমিটার দূরে গিয়ে তাঁকে গভীর নলকূপের পানি আনতে হয়। তবে আধা কিলোমিটার দূরের এ পথে আছে টিলা আর খাল। বর্ষাকালে এ পথ পাড়ি দিতে তাঁদের বিপত্তিতে পড়তে হয়। তখন নিরুপায় হয়ে সবার কূপের পানিই খেতে হয়।
অন্যদিকে সীমান্তঘেঁষা কোচপাড়া গ্রামে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ৫০টি পরিবারের প্রায় ৫০০ মানুষের বসবাস। এখানে পাহাড়ের টিলার ওপর একটিমাত্র গভীর নলকূপ রয়েছে। এই পরিবারের সদস্যদের অনেক কষ্ট করে আধা কিলোমিটার উঁচু-নিচু পথ মাড়িয়ে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতে হয়। সাধারণত বাড়ির মেয়েরা প্রতিদিনই পানি আনেন। একবারে এক কলসি করে পানি আনতে পারেন একজন। সেই পানি একদম হিসাব করে ব্যবহার করতে হয় তাঁদের।
কোচপাড়ার গৃহিণী নিরালা কোচ বলেন, সারা বছর চেল্লাখালি নদীর পানি দিয়ে ৫০টি পরিবারের লোকজন ঘরের কাজ করেন। শুধু খাওয়ার পানি আনতে প্রচণ্ড কষ্ট করতে হয়।