সংযমের রমজানেও ঢালাও অসংযম
‘আরও বেশি করে কেনেন। এখনও বেগুনের কেজি ৮০ টাকায় আছে। রোজা ঢুকলেই কেজি ১০০ ছাড়াবে।’ রাজধানীর জিগাতলা বউবাজারের ক্রেতার কানে এভাবেই ‘পরামর্শ’ ঢাললেন সবজি বিক্রেতা তাজুল ইসলাম। লেবুর হালি ৪০ টাকা শুনে ভিরমি খেলেন আরেক ক্রেতা। সঙ্গে সঙ্গে বিক্রেতা মোতালেব হোসেনের বক্রোক্তি, ‘এটাই বেশি মনে অয়! শুইনা রাখেন– রোজায় ৮০ হইব।’
বাজারে দামের আগুনে পুড়তে থাকা ক্রেতা রোজার দিন দশেক আগে থেকেই শুনছেন, সামনে দাম আরও বাড়বে। কী কারণে বাড়বে? এর জবাবে বেশি করে বেগুন কেনার পরামর্শ দেওয়া তাজুল বললেন, রোজায় সবার বেগুনি লাগবে। বেগুনের চাহিদা বাড়বে। তাই দামও বাড়বে। লেবু বিক্রেতা মোতালেবের জবাব, ইফতারে শরবতের চাহিদা বাড়ে, তাই লেবুরও দাম ছুটবে।
অর্থনীতির পুরোনো সূত্র– জোগানের চেয়ে চাহিদা বেশি হলে দাম বাড়ে। সেই রসায়নে রোজা এলে বেড়ে যায় সব সদাইয়ের দরদাম। যদিও গত মঙ্গলবারই সুদূর আরব আমিরাত থেকে খবর এসেছে, রমজান উপলক্ষে দেশটির সব সুপারশপে ১০ হাজার রকমের খাদ্যপণ্য ৭৫ শতাংশ ছাড়ে কিনতে পারবেন ক্রেতা। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অনেক মানুষ গর্ব করেন। ইসলামের বিধান মেনে অধিকাংশ মানুষ রোজা রাখলেও রমজান এলে নিত্যপণ্যের দাম এখানে উল্টো বাড়ে!
কেন বাড়ে? সাধারণ মানুষের কাছে এ প্রশ্নের জবাব খোঁজার চেষ্টা করেছে সমকাল।
উত্তর সরল। রোজার মানে সংযম হলেও ক্রেতা-বিক্রেতা দু’পক্ষই অসংযত। বিত্তবান ক্রেতা কেনেন প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পণ্য। তাতে বাজারে পড়ে জোগানের টান। আবার বিক্রেতার কাছে রোজা মানে ‘ব্যবসার মাস’। চাহিদা বেশি, তাই দাম যা হোক, প্রয়োজন মেটাতে ধনী-গরিব সব ক্রেতা কিনতে বাধ্য।
ইসলামী চিন্তাবিদরা বলছেন, রমজানের শিক্ষার উল্টো পথে চলছে বাংলাদেশ। শুধু নিত্যপণ্যের দাম নয়, ঈদের ছুতায় উপঢৌকন বা ঘুষের রেটও থাকে বাড়তি! যার ঘুষ নেওয়ার ক্ষমতা নেই, তিনিও ঈদের ধুয়া তুলে চান বকশিশ। যাঁর পেশিশক্তি আছে, তাঁর ঈদ উদযাপনের অনুঘটক চাঁদা।
এ প্রসঙ্গে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা রুহুল আমিন বলেন, ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি রমজান। তা মেনে রোজা রাখলেও রমজান মানে যে সংযম, তা মানছে না কেউ। রোজা মানে শুধু দিনভর উপোস নয়; রোজার মর্মার্থ, জীবনের সর্বক্ষেত্রে সংযমী হতে হবে। কম খেতে হবে। ভোগবিলাস ত্যাগ করতে হবে। লোভ-লিপ্সা, হিংসা-বিদ্বেষ থেকে দূরে থাকতে হবে। করতে হবে দান ও ক্ষমা।