![](https://media.priyo.com/img/500x/https://gumlet.assettype.com/bdnews24%2F2023-02%2F59825dde-4407-42b1-b5a5-23b892dd9a0e%2Fekushey_book_fair_090223_16.jpg?auto=format%2Ccompress&fmt=webp&format=webp&w=768)
প্রয়োজন বনাম ভালোবাসা: ফিকশনের পরাজয়
গল্পরা হেরে যাচ্ছে, মার খাচ্ছে পদে পদে। নতুন এই পৃথিবী বানানো গল্পে আর আগ্রহী নয়। সে চায় ফ্যাক্ট, সত্য ঘটনা।
নন-ফিকশনের উত্থান হয়েছে ব্যাপক আকারে, জোয়ারের মতো। বড় বড় ঢেউ উঠছে, ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে জনপ্রিয় ফিকশন লেখকদের, নির্বাসন দিচ্ছে ছোট্ট নির্জন এক দ্বীপে। ডিস্টোপিয়ান এক উপন্যাস যেন, যেখানে চরিত্রগুলো হলেন পৃথিবীর তাবৎ ফিকশন রাইটার। আর সেই উপন্যাসটা লিখতে বসেছেন এক দক্ষ নন-ফিকশন লেখক।
বইয়ের জগৎটা বদলে গেছে। নন-ফিকশন বই যে গতিতে উঠে আসছে, তাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকান পাবলিশার্সের তথ্যমতে, নন-ফিকশন বইয়ের বিক্রির গ্রাফ ২০১৩ থেকে উর্ধ্বমুখী। অন্যদিকে কল্পকাহিনির বিক্রি এক জায়গায় থেমে আছে। এ তো গেল আমেরিকার চিত্র।
আমাদের বাংলাদেশের প্রকাশকদের কাছে জিজ্ঞেস করুন, তারা কী ধরনের বই ছাপতে আগ্রহী? আগ্রহের একেবারে তলানিতে থাকবে কবিতার বই, এরপরের স্থানটাই গল্প-উপন্যাসের। তবে নন-ফিকশনে তাদের আগ্রহের কমতি নেই। রাজনীতির বই থেকে শুরু করে আত্ম-উন্নয়নমূলক বই কিংবা স্পোকেন ইংলিশ টোটকা ছাপতে পারলে মুনাফা নিশ্চিত। সেল বাড়ানোর জন্য এগুলোর প্রচারণাও চলে সমানে।
সৃষ্টিশীল বইয়ের ক্ষেত্রে প্রকাশনা সংস্থার তরফ থেকে এর অর্ধেক প্রচারণাও চালানো হয় কি না সন্দেহ আছে। যেটুকু প্রচারণা হয়, লেখকরা নিজ দায়িত্বে চালান। সবারই মাশাল্লাহ একটা করে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে। কবি-সাহিত্যিকরা সেখানে নিজের ঢোল পেটাতে পেটাতে ফাটিয়ে ফেলেন। এতে করে পাঠকের আগ্রহ তৈরি হওয়ার বদলে একেবারে উবে যায়।
পাঠক রুচির এই ব্যাপক পরিবর্তনের কারণটা কী? আসলে জীবন এখন অনেক কঠিন। টিকে থাকতে হলে আধুনিক মানুষের দরকার দিক-নির্দেশনা, উৎসাহ এবং প্রয়োজনীয় জ্ঞান যার মাধ্যমে সে জীবনটাকে একটু গুছিয়ে নিতে পারবে। আর এই জিনিসগুলো একসাথে করে একটা বুফের মতো করে পরিবেশন করছে নন-ফিকশন ইন্ডাস্ট্রি। বলছে, যার যেটা দরকার বেছে নাও।
অন্যদিকে ফিকশন ইন্ডাস্ট্রি হলো চুলায় ভুলে ফেলে রাখা চায়ের পাত্র। অল্প আঁচে পানি গরম হয়ে গেছে, কিন্তু ভুলে গেছেন, আপনি চা খেতে চেয়েছিলেন।
সৃষ্টিশীল সাহিত্যকে চা না বলে ডেজার্টও বলা যেতে পারে। অন্যদিকে নন-ফিকশন হলো পুষ্টিকর খাবার। সারা বিশ্ব এখন হেলদি ফুডের দিকে ঝুঁকছে।
ডেজার্ট খেতে সুস্বাদু। মাঝেমধ্যে টেস্টও করা যায়। তবে আপনি প্রতিটা খাবারেই মিষ্টি চাইবেন না, স্বাস্থ্যসম্মত নয়। ফিকশন কি তবে শুধুই ডেজার্ট? মানসিক পুষ্টির জন্য দরকার নেই এর? এক কালে তো ছিল। কী এমন হলো যে মানসিক পুষ্টির দরকারটা ফুরোল?
- ট্যাগ:
- মতামত
- ফিকশন
- বই প্রকাশ
- অমর একুশে বইমেলা