তিন দশকে পানিপ্রবাহ বেড়েছে ১৫ শতাংশ হারে, ঝুঁকিতে দেশ
দেশের প্রধান নদ–নদীগুলোর প্রধান সম্পদ হচ্ছে উজান থেকে আসা পানির প্রবাহ। নদ–নদীর পানির ওপর ভর করে দেশের কৃষি ও বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবিকা চলে। কিন্তু সেই পানির পরিমাণ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে বাংলাদেশ।
দেশে আসা পানির ৯০ শতাংশের উৎস গঙ্গা–ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা। গত ৩০ বছরে ওই তিন অববাহিকার পানির প্রবাহ ১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। তবে যেসব সময়ে দেশে পানি বেশি এলে বন্যা হয়, অর্থাৎ বর্ষাকালে পানি বেশি আসছে। আর যখন পানি দরকার অর্থাৎ শুস্ক মৌসুম, তখন পানি কম আসছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের এসব বিপদ তৈরি হচ্ছে।
চলতি ২০২৩ থেকে আগামী ২০৫০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কী করবে, তা নিয়ে তৈরি করা জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় (ন্যাপ) এই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। গত অক্টোবরে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএফসিসিসি) কাছে ওই প্রতিবেদন জমা দেয় বাংলাদেশ। তাতে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ও তা মোকাবিলায় বাংলাদেশ কী করছে এবং কী করা উচিত তা তুলে ধরা হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে আজ মঙ্গলবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও আন্তর্জাতিক নদী কৃত্য দিবস পালিত হবে। এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ‘নদীরও অধিকার আছে’। দিবসটি উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন বেসরকারি ও নদী রক্ষাবিষয়ক সংস্থা নানা কর্মসূচি পালন করবে।
যুক্তরাজ্যের ড্যান্ডি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক নন্দন মুখার্জি বাংলাদেশের গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা অববাহিকায় বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, ওই তিন নদীর পানির প্রবাহ দ্রুত বাড়ছে। এর মধ্যে যমুনা অববাহিকায় বন্যার পরিমাণ এই শতাব্দীর মধ্যে ৯ গুণ, গঙ্গা বা পদ্মায় ৬ গুণ ও যমুনায় প্রায় ৩ গুণ বাড়বে। একই সঙ্গে বন্যা শুরুর সময়কাল এক থেকে দেড় মাস পিছিয়ে যাবে। আর পানি নামবে আগের চেয়ে বেশি সময় ধরে।
এ ব্যাপারে নন্দন মুখার্জি প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের বৃষ্টি ও নদীর পানিনির্ভর কৃষিব্যবস্থার ওপরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ব্যাপক হাতে পারে। কারণ, ওই বন্যা ও পানিপ্রবাহের সময়কাল বেড়ে যাওয়ায় মূলত আমন ও আউশ ধানের ক্ষতি বাড়তে পারে। একই সঙ্গে অল্প সময়ে দ্রুত পানি বাড়তে থাকলে এবং পানির প্রবাহ বেড়ে গিয়ে নদীর ভাঙন আবার বাড়তে পারে।