চাল আটা ডিম আলু নেই, আছে সিগারেট ও কয়লা
দীর্ঘ ৬৭ বছরের পুরোনো আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের মানুষের জন্য সিগারেট, কয়লা ও কাঠ এখনো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। সেই সঙ্গে এলাচি, লবঙ্গ, দারুচিনি, তেজপাতার মতো কম ব্যবহৃত হয়, এমন পণ্যগুলোও রয়েছে নিত্যপণ্যের তালিকায়। অথচ পানি থেকে শুরু করে ধান, চাল, গম, আটা, ডিম, আলু, সাবান, কীটনাশক, ডিটারজেন্ট পাউডার ও টুথপেস্ট—এগুলো সমাজের সর্বস্তরে প্রতিদিন কমবেশি ব্যবহৃত হলেও নিত্যপণ্য হিসেবে আইনি স্বীকৃতি পায়নি।
আইনটির নাম ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৫৬’। পুরোনো ওই পণ্যতালিকায় সামান্য পরিবর্তন করেছে বাংলাদেশ। ২০১২ সালে একবার সরকার অত্যাবশ্যকীয় পণ্যতালিকা সংশোধন করে। তখন চিনি, লবণ, পেঁয়াজ, ছোলা, শুকনা মরিচসহ ১৭ ধরনের পণ্যকে নিত্যপণ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে আইন আগেরটিই বহাল থাকে। ফলে নিত্যপণ্য নয় এমন কিছু পণ্য, যেমন সিগারেট–কাঠ তালিকা থেকে বাদ পড়েনি।
অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইনটিকে যুগোপযোগী করতে তিনটি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) ও বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) বিষয়ে পঞ্চম জাতিসংঘ সম্মেলনে যোগ দিতে কাতারের রাজধানী দোহায় যাওয়ার আগে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অত্যাবশ্যকীয় নিত্যপণ্যের তালিকা সংশোধন করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি কাজ করছে। আশা করছি, এবার নতুন কিছু পণ্য যুক্ত হবে এবং বর্তমানে তালিকায় থাকা কিছু পণ্য বাদ যাবে।’ বাণিজ্যসচিবের কথা অনুযায়ী এবারও আইন সংশোধন হচ্ছে না, হচ্ছে নিত্যপণ্যের তালিকা সংশোধন অর্থাৎ তালিকার যোজন-বিয়োজন।
অত্যাবশ্যকীয় পণ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকা না-থাকার মধ্যে পার্থক্য কি—এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, তালিকায় থাকলে দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার যেকোনো সময় ব্যবস্থা নিতে পারে। অতিরিক্ত মুনাফার লোভে কেউ কারসাজি করলে, লম্বা সময়ের জন্য মজুত রাখলে বা কৃত্রিম সংকট তৈরি করলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়। শুধু মূল্য নিয়ন্ত্রণ নয়, আইন অনুযায়ী অত্যাবশ্যকীয় নিত্যপণ্যের উৎপাদন ও বিপণন নিয়ন্ত্রণ করারও ক্ষমতা রাখে সরকার।