আদানির সঙ্গে চুক্তি যে ৯ কারণে জাতীয় স্বার্থবিরোধী
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভারতের অংশগ্রহণ ক্রমে বাড়ছে। বর্তমানে ভারত থেকে বাংলাদেশ ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে। এর সঙ্গে আরও যুক্ত হতে যাচ্ছে ভারতের আদানি গ্রুপের কাছ থেকে আমদানি করা বিদ্যুৎ। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ আগামী ২৫ বছরের জন্য ঝাড়খন্ডের গোড্ডায় অবস্থিত আদানি গ্রুপের কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয় করবে।
ভারতের আদানি গ্রুপের কাছ থেকে এই বিদ্যুৎ আমদানি বাংলাদেশের জন্য লাভজনক না বোঝা—সে বিষয়ে বেশ অনেক দিন ধরেই প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে। ২০১৮ সালের এপ্রিলে ইনস্টিটিউট অব এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের (আইফা) এক প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রথম আলোর এক রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ভারতের আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনতে বাংলাদেশকে ২৫ বছরে ৭০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় করতে হবে।
সম্প্রতি এই বিতর্ক আবারও সামনে আসে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়াশিংটন পোস্ট–এ প্রকাশিত একটি সংবাদের সূত্র ধরে। সংবাদটিতে ভারতের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদি সরকার ভারতীয় বৃহৎ ব্যবসায়ী গ্রুপ আদানিকে কীভাবে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে এমনকি বিদেশেও পৃষ্ঠপোষকতা করে চলেছে, তার দৃষ্টান্ত হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে আদানি গ্রুপের কয়লাবিদ্যুৎ রপ্তানি চুক্তির প্রসঙ্গটি উত্থাপন করা হয়। রিপোর্টটিতে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র ধরে বলা হয়, ২০১৫ সালে জুনে প্রথমবার বাংলাদেশ সফরের সময়ই নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভারতীয় কোম্পানির অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করতে বলেন যার অন্যতম সুবিধাভোগী হলো আদানি গ্রুপ।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০–এর আওতায় বিনা দরপত্রে স্বাক্ষরিত এই চুক্তির বিভিন্ন ধারা ও এ বিষয়ে শেয়ারবিজ, দ্য ডেইলি স্টার, সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণে করলে দেখা যায়, চুক্তির শর্তগুলো বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থবিরোধী। কারণ—
প্রথমত, চুক্তির ধারা ৩.১(বি) অনুসারে, আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতার ৩৪ শতাংশের চেয়ে কম বিদ্যুৎ ক্রয় করলে পিডিবিকে নির্দিষ্ট অঙ্কের জরিমানা দিতে হবে।
দ্বিতীয়ত, ধারা ১৩.১ (জি) এর চার উপধারা অনুযায়ী, বার্ষিক ঘোষিত চাহিদার যত কম বিদ্যুৎ পিডিবি নেবে, ততটুকু বিদ্যুতের কয়লার দাম, জাহাজের ভাড়া, বন্দরের খরচ দিতে হবে পিডিবিকে।