ইসি সংকট জানে, সমাধান জানে না
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা প্রশ্নে বড় দুই দলের অনড় অবস্থান দেশের জন্য বিপজ্জনক। এই অনড় অবস্থানের মধ্যে নির্বাচন হলে এবং কোনো বড় দল নির্বাচনে অংশ না নিলে ফলাফলের ওপর ঝুঁকি থাকতে পারে। একটি আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, মানুষ বিপদগ্রস্ত হতে পারে।’
তাঁর এই বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে অনেকগুলো বিষয় সামনে আসে। প্রথমত, নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির বিপরীতমুখী অবস্থান। দ্বিতীয়ত, একটি বড় দল অংশ না নিলে ফলাফলে ঝুঁকি। এই ঝুঁকিটা ২০১৪ ও ২০১৮ থেকে কোনো অংশে কম হবে না। তৃতীয়ত, নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে। এর আগেও তিনি এ রকম সতর্কবার্তা দিয়েছেন। কিন্তু পরিস্থিতির অদলবদল হয়নি। নির্বাচন নিয়ে সংকট ও অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে।
বহু বছর ধরেই নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে ‘কাজিয়া’ চলে এসেছে। নদীর চর দখলের জন্য আশপাশের প্রভাবশালী পক্ষের মধ্যে যেমন কাজিয়া চলে, নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়েও আমাদের নেতারা কাজিয়া করতে পছন্দ করেন। প্রশ্ন হলো, এই কাজিয়া থামিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, না সুষ্ঠু নির্বাচন করে কাজিয়া থামবে? সে প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা নেই।
আমরা ধরে নিতে পারি, সিইসি ও তাঁর সহযোগী কমিশনাররা নির্বাচন নিয়ে দেশে যে একটি রাজনৈতিক সংকট চলছে, সেটি ধরতে পেরেছেন। কিন্তু সমস্যাটি কীভাবে সমাধান হবে, সেটি তাঁরা জানেন না। এ কারণে তাঁদের কথাবার্তায় একধরনের স্ববিরোধিতা দেখছি শুরু থেকেই। কখনো তাঁরা বলেন, সব দলকে নিয়েই নির্বাচন হতে হবে। আবার বলেন, কোনো দল নির্বাচনে না এলে কমিশনের কিছু করার নেই।
আসলেই কি কিছু করার নেই? এম এ আজিজ কমিশনের কথা নিশ্চয়ই তাঁদের মনে আছে। তারাও একটি একতরফা ও জবরদস্তির নির্বাচন দেশবাসীর ওপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। শেষ পর্যন্ত পারেনি। ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি যে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল, সেটি হয়নি। তার আগেই এক–এগারোর পরিবর্তন এল। করতে চেয়েছিল। নির্বাচন পুরোপুরি রাজনৈতিক বিষয়। এই সংকটের সমাধান রাজনৈতিকভাবেই হতে হবে।
প্রশ্ন হলো সে সমাধানটি কে করবেন? নির্বাচন কমিশন মাঝেমধ্যে বলার চেষ্টা করছে যে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে করতে হবে। একদিক থেকে কথাটা ঠিক। কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্ব সমাধান না করলে কি ইসি চুপচাপ বসে থাকবে?