ভোট আছে, উৎসব নেই
দেশের ছয়টি সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ১ ফেব্রুয়ারি। সবগুলো আসনেই ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে, মাত্র ১৬ শতাংশ। ভোট পড়ার এমন হার নির্দেশ করছে, নির্বাচন নিয়ে মানুষের আগ্রহে ভাটা পড়ছে দিন দিন।
এমন পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার দেশে পঞ্চমবারের মতো পালিত হচ্ছে ‘জাতীয় ভোটার দিবস’। এবারের ভোটার দিবসের প্রতিপাদ্য ‘ভোটার হব নিয়ম মেনে, ভোট দেব যোগ্যজনে’।
নিয়ম মেনে ভোটার হলেও কিন্তু জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে যোগ্যজন বাছাই করতে ভোটকেন্দ্রে যাননি অনেক নতুন ভোটার। ২০১৮ সালের নির্বাচনে নতুন ভোটার হন রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা জানে আলম। কিন্তু সে বছর নিজের প্রথম ভোটটি দিতে পারেননি দেশের এই নাগরিক। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রের বাইরে থেকে সবাই বলছিল, আগের রাতেই ব্যালট ভরে গেছে। সেই যে ভোট নিয়ে আগ্রহ নষ্ট হয়েছে, আর ভোট দিইনি।’
একই কথা জানালেন মিরপুরের বাসিন্দা ইসমত আরা। তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালেও ভোট দিতে পারিনি। পরেরবারও পারিনি। এরপর ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও আমাদের পরিবারের কেউ ভোট দেয়নি।’
বাড্ডার ৬৫ বছর বয়সী ভোটার দেলোয়ারা হক বলেন, ‘খবরে দেখি আগেই ভোট হয়ে যায়। ভোট দিতে গিয়ে কী করব?’
একই এলাকার ইয়াসমিন আক্তার জানান, ‘ভোট কাকে দিতে যাব? এখন তো ভোট না দিলেও চলে। গত নির্বাচনে দিতে পারিনি। এবার হয়তো কেন্দ্রেও যাওয়া হবে না।’
বিশিষ্টজনেরা বলছেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে পরপর দুটি ‘বিতর্কিত’ নির্বাচনের পর ইসির প্রতি মানুষের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। ভোটে আগ্রহ কমেছে ভোটারদের।
এ জন্য ইসির প্রতি ভোটারদের আস্থা না থাকাকে দায়ী করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ইসির উচিত আগে ভোটারদের আস্থা অর্জন করা। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর মানুষ এখন ভোটে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। কারণ, ইসি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে না। বর্তমান ইসির কর্মকাণ্ড নিয়েও সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
তবে মানুষের ভোটে আগ্রহ নেই, এমন কথা মানতে নারাজ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। তিনি বলেন, ‘ভোট দেওয়া ভোটারের গণতান্ত্রিক অধিকার। কেউ ভোট দিতে না যাওয়া তার ব্যক্তিগত ইচ্ছা। গত দুটি নির্বাচনে কাউকে ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয়নি। যাঁরা কেন্দ্রে গেছেন, তাঁরা ভোট দিতে পেরেছেন।’