লজ্জায় মাথাটা নত হয়ে যাবে

www.ajkerpatrika.com জাহীদ রেজা নূর প্রকাশিত: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৭:৩১

এ কথা তো ঠিক, একুশের মতো উজ্জ্বল একটি ঠিকানা আমাদের আছে, যা চিরকাল ভাষার দাবির উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে থাকবে, আবার এ কথাও তো ঠিক, সেই একুশের অঙ্গীকারগুলো রক্ষা করার ব্যাপারে আমাদের রয়েছে সীমাহীন ব্যর্থতা। 


ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ তো চলে গেছে, এবার সম্ভবত একটু ঘুরে বসা যায়। আর একটা দিন পার হলেই বাঙালির টান টান আবেগ শিথিল হয়ে পড়বে। আবার কিছুকালের জন্য একুশকে ভুলে থাকা যাবে। মার্চ মাসে আছে স্বাধীনতার আমেজ। এবার লেখালেখি, সেমিনার, বক্তৃতা, টক শো হবে স্বাধীনতাময়। আমাদের এই হুজুগে স্বভাব যথেষ্ট পোক্ত হয়ে আছে।


সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলন নিয়ে গলার রগ ফুলিয়ে বক্তৃতাটা এখন বন্ধ রাখতে হবে পুরো এক বছর। সামনের ১১ মাসে উচ্চ আদালতে একটার পর একটা ইংরেজিতে লেখা রায় নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য হবে না। উচ্চ আদালতের ভাষা বাংলা করা হলে বাদী-বিবাদী দুই পক্ষই সহজে বুঝতে পারত। এটা যে আমাদের সবার জন্য খুবই জরুরি একটি বিষয় এবং তা বাস্তবে পরিণত করতে হলে কিছুটা মেহনত করা দরকার, কিন্তু সেটা পরিশ্রমসাপেক্ষ বলে ইংরেজির সেই চলে আসা ধারাটাই ধরে রাখা হয়।


আর করপোরেট অফিস সংস্কৃতি? বাংলাটা একটু বাঁকিয়ে না বলতে পারলে, ‘আমরা’কে ‘আমড়া’ না বললে, ‘গরম’কে ‘গড়ম’ বলা না হলে, ‘কঠিন’কে ‘ডিফিকাল্ট’ না বললে সেই সংস্কৃতির সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে নেওয়া কঠিন। তাতে হালে পানি পাওয়াও কঠিন। যতই বাংলা সংস্কৃতির প্রতি মায়াকান্না করা হোক না কেন, আমাদের করপোরেট জগতে ইংরেজি জানা মানুষ ছাড়া গতি নেই, সেটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। সেখানে উৎসবের আদলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ‘সেলিব্রেট’ করা হয় বটে, কিন্তু সেটাও একটা ‘রিচুয়াল’ পালন করার মতো।


দুই. এবার একটি কঠিন প্রশ্ন করতে হয়। গরিব মানুষ বেশি বলে এখনো যাচাই করে দেখার সুযোগ হয়নি, এ দেশের কত ভাগ মানুষ তাঁর সততার কারণেই সৎ থাকতে পারেন, আর কত ভাগ মানুষ অসৎ কাজের সুযোগ পান না বলে সৎ থাকেন। অভিজ্ঞতা বলে, অর্থ সমাগমের সঙ্গে চরিত্র বদল আমাদের একটা স্বাভাবিক প্রবণতা।


আমারই এক কনিষ্ঠ সহকর্মী হঠাৎ একটি পত্রিকার সম্পাদক হয়ে যাওয়ার পর তাঁর ব্যবহারে যে পরিবর্তনগুলো এসেছিল, তা ছিল বিস্ময়কর। এটা শুধু টং চায়ের দোকান থেকে ‘বারিস্তা’ রেস্তোরাঁয় উত্তরণ দিয়ে বোঝানো যাবে না। নিজেকে অভিজাত ক্লাবের সদস্য হিসেবে ভাবতে হলে কোন কোন জিনিস জীবন থেকে ছাঁটাই করতে হবে, সেটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিখে নিয়েছেন তিনি। আর এ রকম হলে নিজের স্বভাবের বাইরে গিয়ে নিজেকে খুঁজে নিতে হয়। একজন তুখোড় কমিউনিস্ট নেতা খবরের কাগজের সম্পাদক হয়ে কীভাবে অভিজাত বুর্জোয়ায় পরিণত হয়েছেন, সে খবর অনেকেই রাখেন।


এই যে পরিবর্তন, তার একটা বড় কারণ হলো, যে শিক্ষায় শিক্ষিত হয় মানুষ, তা আসলে জোলো, জীবনবিমুখ। বস্তা পচা সিলেবাসে যে শিক্ষা রপ্ত হয়, বাস্তব জীবনে তা কোনো কাজে লাগে না। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে পরীক্ষার ফলাফল চাকরি পাওয়ার যোগ্যতা হয় না। পরিচিত বা স্বজন হলেই সে হয়ে উঠতে পারে যোগ্য মানুষ। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোয় এই ‘চেনাজানার’ ভিড় একটু বেশি। তাই একুশে ফেব্রুয়ারির রক্তদানের মর্ম বোঝার ক্ষমতা আমাদের নেই, আমরা তা অর্জন করে উঠতে পারি না। আমরা যে আদর্শ জীবনের কথা ভাবি আর যে জীবনযাপন করি, তার মধ্যে থাকে দুস্তর ব্যবধান।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও