আত্মপরিচয়ের দিন

সমকাল তোফায়েল আহমেদ প্রকাশিত: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০১:০৫

রক্তরাঙা অমর একুশে ফেব্রুয়ারি রক্তের প্লাবনের মধ্য দিয়ে আজ সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গৌরবময় আসনে আসীন। শুধু বাঙালি নয়; বিশ্বের প্রতিটি জাতির মাতৃভাষার মর্যাদা, স্বাধিকার, স্বাধীনতা ও মানুষের মতো বাঁচার দাবির সংগ্রামের দুর্জয় অনুপ্রেরণা সৃষ্টির চির অনির্বাণ শিখার দীপ্তিতে দিগন্ত উদ্ভাসিত করেছে একুশে ফেব্রুয়ারি। জাতি হিসেবে আমরা আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদী ভাবধারার সমন্বয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করেছি। মহান ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়ে এসেছে মহত্তর স্বাধীনতার চেতনা।


প্রকৃতপক্ষে মাতৃভাষার অধিকার রক্ষায় ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৪৮-এর ১১ মার্চ। 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' গ্রন্থে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লিখেছেন, "আমরা দেখলাম, বিরাট ষড়যন্ত্র চলছে বাংলাকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এবং তমদ্দুন মজলিস এর প্রতিবাদ করল এবং দাবি করল, বাংলা ও উর্দু দুই ভাষাকেই রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। আমরা সভা করে প্রতিবাদ শুরু করলাম। এই সময় পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এবং তমদ্দুন মজলিস যুক্তভাবে সর্বদলীয় সভা আহ্বান করে একটা 'রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' গঠন করল। সভায় ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চকে 'বাংলা ভাষা দাবি' দিবস ঘোষণা করা হলো। জেলায় জেলায় আমরা বের হয়ে পড়লাম।" (পৃষ্ঠা-৯১, ৯২)।


'৪৮-এর ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষার দাবিতে বাংলার ছাত্রসমাজ প্রথম প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। সেদিন যারা মাতৃভাষার দাবিতে রাজপথে সংগ্রাম করে কারাবরণ করেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং শামসুল হক তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। তখন কে জানত, '৪৮-এর এই ১১ মার্চের পথ ধরেই '৫২, '৬৯ এবং '৭১-এর একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনায় স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটবে! কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জানতেন। কারণ, তিনি দূরদর্শী নেতা ছিলেন; লক্ষ্য স্থির করে কর্মসূচি নির্ধারণ করতেন। যেদিন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হয়, সেদিনই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন- এই পাকিস্তান বাঙালিদের জন্য হয়নি। একদিন বাংলার ভাগ্যনিয়ন্তা বাঙালিদেরই হতে হবে। আর তাই ধাপে ধাপে সমগ্র জাতিকে প্রস্তুত করেছেন চূড়ান্ত সংগ্রামের জন্য।


'৬৯-এর ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। '৬৯-এর গণআন্দোলনের সর্বব্যাপী গণবিস্টেম্ফারণ ঘটে একুশে ফেব্রুয়ারিতে। সেদিনও খুলনায় পুলিশের গুলিতে ১০ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হয়। '৬৯-এর ১৭ জানুয়ারি ১১ দফা দাবিতে যে আন্দোলন আমরা শুরু করেছিলাম; একুশে ফেব্রুয়ারি তা পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে। ১৫ ফেব্রুয়ারি সার্জেন্ট জহুরুল হক এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি ড. শামসুজ্জোহার মৃত্যুতে বাংলার মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিক্ষুুব্ধ মানুষকে দমাতে সরকার সান্ধ্য আইন জারি করে। আমরা সান্ধ্য আইন ভঙ্গ করে রাজপথে মিছিল করি। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের চেতনা '৬৯-এর গণআন্দোলনের বাঁধভাঙা জোয়ারে পরিপূর্ণতা লাভ করে। আমাদের আহ্বানে আগের ১৭ বছরের সব দৃষ্টান্ত ভঙ্গ করে ঢাকা নগরের অধিবাসীরা অভূতপূর্ব প্রাণচাঞ্চল্যের মাধ্যমে মহান ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদদের পবিত্র স্মৃতির প্রতি প্রাণঢালা শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং প্রশাসনের সর্বত্র বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার জোর দাবি উত্থাপন করে। একটি সুন্দর, নিস্কলুষ, নির্যাতন-নিপীড়নহীন শোষণমুক্ত সমাজব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে ১১ দফার ভিত্তিতে সমগ্র জাতিকে এক মোহনায় শামিল করতে সক্ষম হয়েছিলাম। সেদিনের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলার ঘরে ঘরে স্বাধিকার ও স্বাধীনতার এক নতুন বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল। দিনটি ছিল শুক্রবার। '৬৯-এর গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদদের স্মরণে প্রথম সরকারি ছুটি আদায় করেছিলাম।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও