ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত রবীন্দ্রনাথের ভাস্কর্য ‘গুম’ করে দেওয়ার পর শিক্ষার্থীরা তার ভগ্নাংশ উদ্ধার করে আবার তা স্থাপন করেছেন। এই ‘গুম’ হয়ে যাওয়ার ঘটনা এবং তা পুনঃস্থাপনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের বক্তব্য থেকে এমন ধারণাই জন্মায় যে এই ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার দায়িত্ব কার্যত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিচ্ছে। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই ভাস্কর্য পছন্দ করেনি রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ভাস্কর্যটি স্থাপনের পর সমালোচনা করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রাব্বানী। তিনি প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘একটা ভাস্কর্যের পাশে আরেকটা ভাস্কর্য স্থাপন করা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। অনুমতি ছাড়া এটি বসানো হয়েছে। ক্যাম্পাসে ভাস্কর্য স্থাপনের ক্ষেত্রে কিছু নিয়মনীতি আছে।’ এ কথা নিশ্চয় তিনি এবং অন্যরা জানেন যে এই ভাস্কর্য স্থায়ীভাবে স্থাপিত হয়নি এবং এই ভাস্কর্যের লক্ষ হচ্ছে প্রতিবাদ।
প্রক্টরের এই বক্তব্য যখন ভাস্কর্য ছিল তখনকার, ‘গুম’ হওয়ার আগের। পরে এটি ভাঙা অবস্থায় পেয়ে কুড়িয়ে এনে আবার স্থাপনের পরে প্রক্টর বলেছেন, ‘কোনো ধরনের অবৈধ, অননুমোদিত কোনো কিছু যেন শিক্ষার্থীরা না করেন, সেই পরামর্শ আমরা দিয়েছি। এখনো পরামর্শ দিচ্ছি ও সতর্ক করছি যে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে শিল্প-সংস্কৃতিকে ব্যবহার না করে এটি যেন তারা নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নেয়।’ শুধু তা-ই নয়, ওই শিক্ষার্থীরা এই ভাস্কর্য ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চান কি না, শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত করতে চান কি না, তা নিয়ে নানা মহলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেন অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী।
রবীন্দ্রনাথের ভাস্কর্য অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে এমন বক্তব্য, কিংবা রবীন্দ্রনাথকে ‘ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে’ ব্যবহার করা হতে পারে, এমন কথা শুনে মনে হওয়া বিচিত্র না যে এই কথাগুলো ১৯৬০-এর দশকে বাংলাদেশের মানুষ শুনেছিলেন তাঁদের কাছ থেকে, যাঁরা তখন ক্ষমতায় ছিলেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ইতিহাস যাঁরা জানেন, তাঁদের এ কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার দরকার নেই যে ১৯৬১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন সেনাশাসক আইয়ুব খান এবং তাঁর তল্পিবাহকেরা পাকিস্তানে তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবার্ষিকী পালনে বাধা দিয়েছিল। আর যাঁরা সেই ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত নন, তাঁদের এ কথা জানা জরুরি যে এ ঘটনার পর এই দেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। জন্মশতবার্ষিকীতে যখন রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছিল সারা পৃথিবীতে, সেই সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের বেতারে সাকল্যে ৪৫ মিনিট বরাদ্দ হয়েছিল তাঁর জন্য।
- ট্যাগ:
- মতামত
- গুম
- ভাস্কর্য
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়