‘আদানির গোড্ডা চুক্তি বাংলাদেশকে গাড্ডায় ফেলেছে’
ভারতীয় ধনকুবের শিল্পপতি গৌতম আদানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সখ্য নিয়ে বিশ্বব্যাপী চর্চার মধ্যে ঢুকে পড়েছে বাংলাদেশ। ভারতের এই বিশ্বস্ত বন্ধু প্রতিবেশী দেশকে ঝাড়খন্ড রাজ্য থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে আদানি পাওয়ার। সেই চুক্তি বাংলাদেশের অস্বস্তি বাড়িয়েছে। অভিযোগ, তাদের প্রায় তিন গুণ বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনতে হবে। এই বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহ ঠাকুরতা।
প্রশ্ন: আপনি বলছেন, আদানি ছাড়া ওই প্রকল্পে আর কারও লাভ হবে না। বাংলাদেশ হাঁসফাঁস করছে। পরিত্রাণের উপায় খুঁজছে। তাদের অবস্থাটা হয়েছে সাপের ছুঁচো গেলার মতো?
পরঞ্জয় গুহ ঠাকুরতা: এই চুক্তি ও ধারণা ভারত এবং বাংলাদেশে তো বটেই, পৃথিবীর অন্য অনেক দেশেও বিপুল আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। এ নিয়ে বহু লেখালেখি হচ্ছে। এর প্রেক্ষাপট জানতে গেলে একটু পেছনে যেতে হবে। ২০১৫ সাল। ভারতের ‘লুক ইস্ট’ নীতি ‘অ্যাক্ট ইস্ট’-এ পরিণত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথম প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বেছে নিলেন বাংলাদেশকে। জুন মাসে দুই দিনের সফরে গেলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করলেন। দুই দেশের যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হলো, ‘ভারত ও বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতে আমরা আরও অনেক কিছু করতে পারি।’
প্রশ্ন: তার পরেই তো বিদ্যুৎ চুক্তি?
পরঞ্জয় গুহ ঠাকুরতা: ঠিক তা–ই। বাংলাদেশের পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) ও আদানি পাওয়ার (ঝাড়খন্ড) লিমিটেডের মধ্যে চুক্তি হলো, যা গোড্ডা চুক্তি নামে পরিচিতি পেয়েছে। ভারতের ঝাড়খন্ডের গোড্ডার প্রকল্প থেকে আদানিরা বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। সেই থেকে দিন যত এগিয়েছে, বিতর্ক তত বেড়েছে। দেশে ও বিদেশে। আজ বিশ্বব্যাপী চর্চা হচ্ছে, প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, ওই চুক্তির আইনি বৈধতা নিয়ে।
প্রশ্ন: কেন? একটু ব্যাখ্যা করুন।
পরঞ্জয় গুহ ঠাকুরতা: বেশ। তবে তার আগে এটা বলি, এই গোড্ডা প্রকল্প সত্যিই অভিনব। পৃথিবীতে এ রকম আর কোনো নজির আছে কি না সন্দেহ। কারণ, এর কয়লা আসবে অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইন্দোনেশিয়ায় আদানির খনি থেকে। জাহাজে তা আসবে ওডিশার ধামড়া সমুদ্রবন্দরে। সেই বন্দর আবার আদানিরাই চালায়। সেখান থেকে সেই কয়লা রেলগাড়িতে চাপিয়ে আনা হবে ঝাড়খন্ডের গোড্ডায়। সেখানে আদানির প্রকল্পে উৎপাদিত বিদ্যুৎ পশ্চিমবঙ্গ পার হয়ে যাবে বাংলাদেশে! আমার মনে হয় না এমন ধরনের কোনো প্রকল্প বিশ্বে আর কোথাও আছে।
প্রশ্ন: সংক্ষেপে আন্তমহাদেশীয়ই শুধু নয়, আন্তরাজ্য এবং আন্তর্দেশীয় বিদ্যুৎ বিপণন।
পরঞ্জয় গুহ ঠাকুরতা: ঠিক বলেছেন। সেই সময় ঝাড়খন্ড ছিল বিজেপি শাসিত। মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন রঘুবর দাস। আদানি সংস্থা তাঁর কাছে এই প্রকল্পের জন্য গোড্ডা জেলায় ২ হাজার একর জমি চাইল। সেই জমি নিতে কীভাবে নিয়ম বদলানো হয়েছিল, পেশিশক্তির ব্যবহার হয়েছিল, জবরদস্তি মামলা রুজু হয়েছিল আন্দোলন দমাতে, অকারণে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, গরিব মানুষের জীবিকা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, সেসব নিয়ে বিস্তারিত লেখা হয়েছে বিভিন্ন মাধ্যমে। ভেবে দেখুন, ওখানকার নদীর জল বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হবে অথচ স্থানীয় মানুষের কোনো উপকার হবে না। ওদের জমিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে অথচ তারা পাবে না। পাবে একটা অন্য দেশ!