দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারের নানা কর্মসূচি চালু আছে। এর মাধ্যমে প্রতিটি উপজেলায় শতাধিক প্রকল্পের মাধ্যমে সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কার ইত্যাদি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়ে থাকে। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে এ রকম শত শত প্রকল্পের বরাদ্দ লোপাটের ঘটনা ঘটেছে।
সড়ক নির্মাণ বা সংস্কার দূরে থাক, বেশির ভাগ প্রকল্পেই কাজ না করেই টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। বেহাল সড়কের কারণে স্থানীয় মানুষের ভোগান্তি তো দূর হয়ই না, এসব কর্মসূচির মাধ্যমে যেসব দরিদ্র মানুষ সুবিধাভোগী হওয়ার কথা, তাঁরাও বঞ্চিত হন।
এমন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনাপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে অনন্য উদাহরণ হয়ে ওঠেন একজন কৃষক গাজী কামাল হোসেন। নিজের জমি বিক্রি করে শ্রমিক নিয়োগ করে তৈরি করেছেন গ্রামীণ রাস্তা। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের ঘটনা এটি।
গোটা উপজেলার মানুষের সবজির একটা বিরাট চাহিদা পূরণ হয় কুমিরমারা গ্রাম থেকে। এখানে যাতায়াতের দুরবস্থার কারণে কৃষক, ব্যবসায়ী, স্থানীয় মানুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি ছিল চরমে। এ ছাড়া বর্ষা মৌসুমে গ্রামীণ পথটিসহ কুমিরমারা গ্রাম নদের জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। এলাকার মানুষসহ কৃষকের দুর্ভোগ কামাল হোসেনকে পীড়া দিত।
এর মধ্যে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে হাসপাতালের নেওয়ার সময় ভ্যান উল্টে বিলের মধ্যে পড়ে গেলে ওই মা রাস্তার পাশেই সন্তান প্রসব করেন। সেই দৃশ্য দেখে আর স্থির থাকতে পারেননি কামাল হোসেন। এরপর নিজের ৩০ শতাংশ জমি বিক্রি করে সাত লাখ টাকা খরচ করে রাস্তা নির্মাণ করে ফেলেন। এ কাজের মাধ্যমে গোটা গ্রামবাসীর বাহবা পাচ্ছেন তিনি।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসন জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থাকলে অনেক আগেই এ সড়ক হয়ে যেত। কুমিরমারার মানুষের এত দিন দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে বারবার ধরনা দেওয়া, মানববন্ধন করা সবকিছুই করেছিলেন গ্রামবাসী। শেষে ব্যর্থ হয়ে হতাশ হয়ে পড়েন তাঁরা। সেখানে এখন একটি সড়ক নির্মাণ হওয়ায় তাঁরা অনেক খুশি।