রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যত দিন গড়াচ্ছে, তুরস্ক ততই রাশিয়ার প্রভাবাধীন অঞ্চল, যেমন মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ ককেসাসে তাদের ভূরাজনৈতিক প্রভাব তৈরি করছে। এমনকি রাশিয়ান ফেডারেশনের ভেতর, যেখানে মস্কোর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, এমন অঞ্চলেও তুরস্ক ধীরে ধীরে অবস্থান শক্তিশালী করছে।
এটা অবশ্য কোনো গোপন বিষয় নয় যে তুরস্কের কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী রাশিয়ান ভূখণ্ডের কিছু অংশকে ‘তুর্কি বিশ্ব’-এর অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তুরস্কের রক্ষণশীল সংবাদপত্র কারাক রাশিয়ার ১০টি অঞ্চলের তালিকা প্রকাশ করেছিল, যার মধ্যে তাতারিস্তান, চুভাশিয়ার নাম ছিল। এ অঞ্চলগুলোকে পত্রিকাটি ‘স্বায়ত্তশাসিত তুর্কি রিপাবলিক’ বলে আখ্যায়িত করেছিল।
তিন মাস আগে তুরস্কের ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির শরিক দল ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টির নেতা ডেভলেট বাচেলি ‘তুর্কি বিশ্ব’-এর একটি বিতর্কিত ম্যাপ প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপে এরদোয়ানকে উপহার দেন। এই ম্যাপে রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের কুবান ও রসটভ এবং উত্তর ককেশাস, পূর্ব সার্বিয়া ও ২০১৪ সালে রাশিয়ার অধিকৃত ক্রিমিয়াও ছিল। প্রতিবাদ করার বদলে ক্রেমলিন বরং এ ঘটনায় তুরস্ককে তারিফ করেছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, বাচেলি যে এরদোয়ানকে উপহার দিয়েছেন, এর মধ্যে লজ্জাজনক কিছু নেই। তাঁর মত হলো, নিজ জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার প্রচেষ্টা করছে তুরস্ক।
কিন্তু এসব ঘটনা থেকে তুরস্কের নতুন পররাষ্ট্রনীতির গতিপথ সম্পর্কে স্পষ্ট করে জানা যাচ্ছে। ইউক্রেনে বেকায়দায় পড়ার পর রাশিয়া তুরস্কে অবস্থানরত রুশ নাগরিকদের স্বার্থরক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এদিকে তুরস্কে রুশ নাগরিকদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে গত বছরের সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সেনাবাহিনীতে নতুন নিয়োগের ঘোষণা দেওয়ার পর এ সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়। এসব রুশ নাগরিক তুরস্কে বসবাসের ক্ষেত্রে সমস্যার মুখে পড়ছেন। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া তাঁরা তুরস্ক ছাড়তে পারছেন না।