রাজধানী বাঁচাতে সদিচ্ছা নেই
বিশ্বের কোথাও বড় ভূমিকম্প হলেই বাংলাদেশের প্রস্তুতিবিষয়ক আলোচনার ডালপালা মেলে। গত সোমবার ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় মানবিক বিপর্যয়ের পর 'বাংলাদেশ কতটা ভূমিকম্প সহনশীল'- সেই পুরোনো প্রশ্ন নতুনভাবে সামনে এসেছে। এ নিয়ে সমকালের সঙ্গে গতকাল কথা বলেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাহিদুর রহমান
বাংলাদেশে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া কি সম্ভব?
মেহেদী আহমেদ আনসারী : ভূমিকম্পের আগাম সংকেত দেওয়া সম্ভব নয়। তবে আনুমানিক একটি ধারণা করা যায়। ১৭৬২ সালে ৮ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। এর প্রায় আড়াইশ বছর পার হয়ে গেছে। এ রকম ভূমিকম্প আবার বাংলাদেশে হওয়ার সময় হয়ে গেছে।
তুরস্কের ভূমিকম্প নিয়ে তিন দিন আগেই টুইট করেছিলেন একজন ডাচ গবেষক। এ ব্যাপারে আপনার মত কী?
মেহেদী আহমেদ আনসারী : সেটি আমি দেখেছি। তিনি কীভাবে করেছেন, তা আমার জানা নেই। ভূমিকম্পের পূর্বাভাসের জন্য পৃথিবীর অনেক দেশ কোটি কোটি টাকা খরচ করে চেষ্টা করেছে। তবে কেউ সফল হয়নি। জাপানে ১৫ সেকেন্ড আগে পূর্বাভাস দেওয়ার প্রযুক্তি আছে। এগুলো কোনোটিই সঠিক বার্তা সব সময় দেয় না। নির্দিষ্ট তারিখ ও সময় কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থায় পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, এটি অনেক ব্যয়বহুল। যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান এখন পূর্বাভাস দেওয়া ছেড়ে দিয়েছে। ১৫ সেকেন্ড আগে বার্তা পেলে তো মানুষকে বাঁচানো যাবে না। বাংলাদেশে আনুমানিক ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে একটি ভূমিকম্প হতে পারে- এটা বলা যায়। মূল বিষয় হলো, আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।
আপনি প্রস্তুতির কথা বলছেন। রানা প্লাজা ধসের পর ২০০ কোটি টাকার সরঞ্জামও কেনা হয়েছিল। সে প্রক্রিয়ার সঙ্গে আপনি ছিলেন। সেসব সরঞ্জামের এখন কী অবস্থা?
মেহেদী আহমেদ আনসারী : আমাদের সরঞ্জাম ব্যবহার করার সুযোগ হচ্ছে না। এগুলো ব্যবহার করতে হবে, যত্ন নিতে হবে; না হলে নষ্ট হয়ে যাবে। এখন এগুলো কী অবস্থায় আছে, তা আমার জানা নেই।
তুরস্কে সরঞ্জামের অভাব নেই- তারপরও ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যায়নি।
মেহেদী আহমেদ আনসারী : ঠিকই বলেছেন, ভূমিকম্পে সরঞ্জামও অনেক সময় কাজে লাগে না। একটি-দুটি ভবন হলে সরঞ্জাম কাজে লাগে, অনেক ভবন ধসে পড়লে উপায় থাকে না। রানা প্লাজায় প্রথম উদ্ধারকাজে এগিয়ে এসেছিল স্থানীয় জনগণ। এ জন্য লোকাল কমিউনিটিকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ঢাকায় ওয়ার্ড ও গ্রামে থানা পর্যায়ে মহল্লাভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। মূল কথা, ৯০ শতাংশ মানুষকে ভূমিকম্প থেকে রক্ষা করা যাবে, যদি ভবন ভূমিকম্প সহনীয় হয়। নতুন ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড মানতে বাধ্য করতে হবে। পুরোনো ভবনকে চিহ্নিত করতে হবে। রানা প্লাজা ধসের পর ৩ হাজার ৫০০ ভবনকে আমরা লাল, কমলা, সবুজ ও হলুদ রং দিয়ে চিহ্নিত করেছি। লাল হচ্ছে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এভাবে চিহ্নিত করে ভবন মালিককে চাপ দিতে পারে সরকার। এখানে সরকারের ব্যয়ও হবে না। সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে ভূমিকম্প সহনশীল ভবন নির্মাণে ব্যয়ও বেশি নয়। রাজউক থেকে সব মালিকের কাছে ভবন পরীক্ষা করে সনদ জমা দেওয়ার জন্য চিঠি দিতে হবে। ওই সনদ অনুযায়ী রাজউক ব্যবস্থা নেবে, ভবন রং করে দেবে। তবে এ কাজ সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নয়, আউটসোর্সিয়ের মাধ্যমেই করতে হবে। কারণ, রাজউকের দক্ষ জনবল নেই। রানা প্লাজা ধসের পর ঢাকায় এখন অন্তত ৫০ প্রতিষ্ঠান আছে, যারা এসব কাজ করার সামর্থ্য রাখে।