চা শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধে ন্যায্যতা কোথায়
চা শ্রমিকের অর্থনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণ হয় যেসব বিষয়ের মাধ্যমে তার মধ্যে অন্যতম মালিক ও শ্রমিকপক্ষের মধ্যকার ২ বছর অন্তর হওয়া চুক্তি। সেখানে মালিকপক্ষের প্রতিনিধিত্ব করে বাংলাদেশীয় চা সংসদ এবং শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধিত্ব করে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন।
বাংলাদেশীয় চা সংসদ যেখানে চা বাগান মালিকদের প্রতিনিধিত্ব করে, সেখানে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন ১ লাখ ৩৮ হাজার চা শ্রমিকের একমাত্র ইউনিয়ন এবং তাদের সম্মিলিত দরকষাকষির প্রতিনিধি (সিবিএ)।
এই ২ পক্ষের মধ্যে দ্বিবার্ষিক চুক্তি কখনোই সময়মতো সই হয় না। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর চুক্তি সই হয় ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। অর্থাৎ মেয়াদ শেষ হওয়ার ২ মাস পর চুক্তি সই হয়। চুক্তি সই হওয়ার পর বাগান মালিকরা ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২৬ মাসের বাড়তি মজুরি বকেয়া হিসেবে ৪ কিস্তিতে পরিশোধ করে। এই ২৬ মাসে প্রতিদিনের বাড়তি মজুরি ছিল ১৮ টাকা।
চা বাগানে এভাবে বকেয়া মজুরি পরিশোধ রীতিতে পরিণত হয়ে গেছে।
আরও জটিল বিষয় হচ্ছে, ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালের জন্য চুক্তি এখনো সই হয়নি।
মজুরি নিয়ে চরম অসন্তোষের পরিপ্রেক্ষিতে এবং মজুরি না বাড়ানোর ব্যাপারে মালিকপক্ষের অনড় অবস্থানের কারণে ২০২২ সালের ৯ থেকে ২৭ আগস্ট নজিরবিহীন ধর্মঘট পালন করেন চা শ্রমিকরা। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে চা শ্রমিকের দৈনিক নগদ মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারিত হয়। অর্থাৎ তাদের মজুরি ১২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা বাড়ানো হলো। শ্রমিকদের যেখানে দাবি ছিল ৩০০ টাকা।
দাবি পুরোপুরি পূরণ না হলেও ২০ মাসের বকেয়া বাবদ ৩০ হাজার টাকা পাবেন, এমন আশা নিয়ে ২৮ আগস্ট থেকে তারা কাজে যোগদান করেন।
বাংলাদেশীয় চা সংসদের সচিব ড. কাজী মুজাফর আহমেদ সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, 'স্থায়ী শ্রমিকরা বকেয়া বা এরিয়ার পাবেন এবং বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাথে আলোচনা করে আমরা ঠিক করবো কতো কিস্তিতে বকেয়া শোধ করা হবে। তবে সংসদ অস্থায়ী শ্রমিকদের বকেয়ার ব্যাপারে কিছু করবে না, কারণ তারা আমাদের পরিধির মধ্যে পড়ে না।'
অনেক বাগানে বকেয়া পরিশোধের প্রস্তুতিও শুরু হয়ে যায়। কিন্তু চা শ্রমিকদের জন্য বড় দুঃস্বপ্ন হলো মালিকপক্ষ চুক্তি সই নিয়ে গড়িমসি শুরু করে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- চা শ্রমিক
- ন্যূনতম মজুরি
- মজুরি বৈষম্য