ডিডিটিমুক্ত বাংলাদেশে স্বাগত
বহু পণ্যের গায়ে লেখা থাকে ‘এতে ক্ষতিকারক ডিডিটি নেই’। ক্রেতা-ভোক্তা হিসেবে আমরা আশ্বস্ত হই। হয়তো আমাদের বহুজনের কাছেই ডিডিটির বিষয়টি স্পষ্ট নয়। বিশেষ করে মশার স্প্রে, শুঁটকি মাছ বা কৃষিফসলে ডিডিটির ব্যবহারের কথা আমরা কমবেশি জানি। ‘ডাই ক্লোরো ডাই ফিনাইল ট্রাই ক্লোরো ইথেন’ বা ‘ডিডিটি’ হলো বিশ্বব্যাপী রাসায়নিক দূষণের জন্য দায়ী বিপজ্জনক রাসায়নিক।
কৃষি ও খাদ্যব্যবস্থার রাসায়নীকরণের বিরুদ্ধে একটা প্রবল জনভিত্তি বিস্তার লাভ করছে বিশ্বময়। দীর্ঘ করোনা মহামারী, যুদ্ধ ও বৈশ্বিক সংকট সবকিছু ছাপিয়ে রাসায়নিক কৃষিনির্ভর বাংলাদেশ এক বিরল উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘ চার দশক পর বাংলাদেশ ডিডিটিমুক্ত হয়েছে। বলা হয়ে থাকে, বিশ্বের বৃহত্তম ডিডিটির মজুদটি ছিল বাংলাদেশের চট্টগ্রামে। প্রায় চার দশক পর নিষিদ্ধ ঘোষিত এই মারাত্মক রাসায়নিক বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে নেওয়া হলো। ২০২২ সালের ২ ডিসেম্বর ডিডিটির শেষ চালানটি ধ্বংস করার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে ফ্রান্সে যায়। ডিডিটি অপসারণের কাজটি কোনোভাবেই সহজ ছিল না। পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত সতর্কতা, নীতিগত প্রশ্ন, অর্থায়ন এবং সামগ্রিকভাবে রাজনৈতিক অঙ্গীকারÑসবকিছু এক কাতারে আসতে প্রায় চারটি দশক লেগেছে। জীবন ও প্রতিবেশের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এই ডিডিটি অপসারণ ব্যবস্থাপনার নেতৃত্ব দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটির (জিইএফ) অর্থায়নে, বাংলাদেশ সরকার এবং এফএও এর সহ-অর্থায়নে ‘পেস্টিসাইড রিস্ক রিডাকশন ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় ডিডিটি অপসারণ ও নিষ্ক্রিয়করণের কাজটি সম্পন্ন হয়েছে।
গণমাধ্যম সূত্র জানায়, ডিডিটি পাউডার নিষ্ক্রিয়করণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৫৫ কোটি টাকা। ৩৫৫ কোটি টাকার এই প্রকল্পে সরকারের নিজের খরচ ২১৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। বাকি ৭০ কোটি ১০ লাখ গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটিজ এবং ৬৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ ম্যালেরিয়া নির্মূলে ৫০০ টন ডিডিটি আমদানি করে এবং এর আগের আরও ৫০০ টনসহ এক হাজার টন ডিডিটি দীর্ঘ ৩৭ বছর চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের কেন্দ্রীয় ওষুধাগারের গোডাউনে পড়েছিল। ডিডিটি অপসারণ প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয় গ্রিসের একটি প্রতিষ্ঠান। বিশেষ পোশাক ও সতর্কতা অবলম্বন করে এসব রাসায়নিক কনটেইনারে ভরা হয় এবং পরিবহন করা হয়। অপসারণের সময় সমগ্র এলাকাকে রেড জোন বা বিপজ্জনক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। অপসারণ প্রক্রিয়ার পরিচালক গণমাধ্যমকে জানান, বিশেষ জাহাজের মাধ্যমে এই রাসায়নিক সমুদ্রপথে ১২টি বন্দর হয়ে ফ্রান্সে যাবে এবং সেখানে আন্তর্জাতিক আইন ও নীতি মেনে বিশেষ চুল্লিতে এসব নিষ্ক্রিয় করা হবে। বেশ কয়েক মাসের এ দীর্ঘ প্রক্রিয়ার সর্বত্র ঝুঁকি ও বিপদ রয়েছে। তারপরও বিশ্ব থেকে বিপজ্জনক ডিডিটির সবচেয়ে বড় মজুদটি অপসারণ করা গেছে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- দূষণ
- রাসায়নিক উপাদান
- বিপজ্জনক