বারবার দাম বাড়িয়ে কি গ্যাস–সংকট মেটানো যাবে?
বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়ানোর এক সপ্তাহের মধ্যেই নির্বাহী আদেশে রেকর্ড পরিমাণ বাড়ানো হলো গ্যাসের দাম। গড় মূল্যবৃদ্ধি ৮২ শতাংশ হলেও বিদ্যুৎ ও শিল্প খাতে মূল্যবৃদ্ধির হার ১৫০ থেকে ১৭৯ শতাংশ। (এবার গ্যাসের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি, প্রথম আলো, ১৯ জানুয়ারি ২০২৩) মাত্র সাত মাস আগেই জুন ২০২২ এ গ্যাসের দাম গড়ে ২৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। এবার আবাসিক, পরিবহন এবং সার উৎপাদনে গ্যাসের দাম বাড়ানো না হলেও বিদ্যুৎ ও শিল্প খাতে গ্যাসের মূল্য প্রায় তিন গুণ হওয়ার ফলে বিদ্যুৎ থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে, যা ইতিমধ্যেই মূল্যস্ফীতিতে বিপর্যস্ত জনজীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলবে।
দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৫০ শতাংশের বেশি আসে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। এখন সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৫ টাকা ২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৪ টাকা করার ফলে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে, ফলে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে ইতিমধ্যেই ঘাটতিতে থাকা পিডিবির ঘাটতি আরও বাড়বে, ফলে বিদ্যুতের দাম আরও বাড়ানোর চাপ তৈরি হবে।
বিদ্যুৎ, শিল্প, ক্যাপটিভ ও বাণিজ্যিক খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকে উচ্চ মূল্যে এলএনজি আমদানি করে বর্ধিত চাহিদা মেটানোর কথা বলা হয়েছে। (গ্যাসের দাম বাড়ল কেন, ব্যাখ্যা দিল মন্ত্রণালয়, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, ১৮ জানুয়ারি ২০২৩) গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ফলে জনগণের পকেট থেকে সরকারি সংস্থার কাছে বাড়তি টাকা গেলেও তাতে করে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বাড়তি দামে এলএনজি কেনা সম্ভব হবে কি না, সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। কারণ, এলএনজি আমদানির জন্য প্রয়োজন ডলার।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটের মধ্যে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি বাবদ পাওয়া বাড়তি টাকা দিয়ে প্রয়োজনীয় ডলার পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে।
কারণ প্রথমত, ডলার–সংকটের কারণে সময়মতো কয়লা আমদানি করতে না পারার কারণে কয়লাভিত্তিক রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। (ডলার–সংকটে কয়লার আমদানি নেই, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, ১৫ জানুয়ারি ২০২৩) ব্যাংকগুলো ডলার–সংকটের কারণে কয়লা আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খুলতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে কয়লাচালিত ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যক্রমও বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। (কয়লা–সংকটের কারণে ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধের আশঙ্কা, ইউএনবি, ১৭ জানুয়ারি ২০২৩) এ ছাড়া মার্কিন ডলারে আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে না পারায় রমজান মাসকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা তিনটি জাহাজের প্রায় ৫৪ হাজার টন চিনি ও ভোজ্যতেলের খালাস আটকে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। (রোজার পণ্য জাহাজে আটকা, প্রথম আলো, ১৮ জানুয়ারি ২০২৩) তাহলে ডলার–সংকটের কারণে হাতে বাড়তি টাকা থাকলেও সরকার যে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ডলার দিয়ে বাড়তি এলএনজি ক্রয় করতে পারবে, তার কি নিশ্চয়তা!
- ট্যাগ:
- মতামত
- গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি
- গ্যাস সংকট