বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার বন্ধ হোক

www.ajkerpatrika.com প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারি ২০২৩, ১৮:১৯

নতুন বছর ২০২৩ সাল শুরু হতে না হতেই দু-দুটো গোলাগুলির ঘটনা ঘটে গেল। পাঠক হয়তো ভাবছেন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশের নতুন কোনো গোলাগুলির ঘটনার কথা বলছি। নতুন বছরে বিরোধী দলের সমাবেশ ও মিছিলকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ এবং গুলির ঘটনা ঘটলেও; যে দুটো ঘটনার কথা বলতে চাইছি, সেই ঘটনার সঙ্গে পুলিশ নয়, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা জড়িত। প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে নতুন বছরের প্রথম দিনেই। মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাঈন উদ্দিন টিটু ও তাঁর অনুসারীরা ১ জানুয়ারি ভোরে বিজয় মেলা থেকে বাড়ি ফেরার পথে কোনো ধরনের উসকানি ছাড়াই উপজেলা ছাত্রলীগ, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগ, জোরারগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর অন্যায়ভাবে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ডজনখানেককে মারাত্মকভাবে আহত করেন। হামলার সময় সামনে থেকেই পিস্তল উঁচিয়ে গুলি করা হয়েছে। এই অপকর্মের জন্য মাঈন উদ্দিন টিটুকে অবশ্য দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়েছে কি না এবং যে পিস্তল দিয়ে গুলি করা হয়েছে, সেটার কোনো লাইসেন্স আছে কি না, সে সম্পর্কে বিশদ কিছু জানা যায়নি।


দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে ১৫ জানুয়ারি ঢাকার গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেটে। এই ঘটনার নায়কও ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠন ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি আব্দুল ওয়াহিদ মিন্টু। ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলোয় প্রকাশিত হয়েছে বলে নতুন করে এখানে আর উল্লেখ করা হলো না। বিকাশে টাকা পাঠানোকে কেন্দ্র করে ডিএনসিসি মার্কেটের মোবাইল এজেন্ট দোকানি হাবিবুর রহমানকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বেধড়ক মারধর করলে মার্কেটের অন্য দোকানিরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং মিন্টু ও তাঁর লোকজনের ওপর চড়াও হন। এ সময় মিন্টু তাঁর কোমর থেকে পিস্তল বের করে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকেন। মিন্টুর পিস্তল থেকে ছোড়া গুলিতে একজন ভ্যানচালক ও একজন গাড়িচালক আহত হন। এ ঘটনায় মামলা হয় এবং গুলশান থানার পুলিশ মিন্টুসহ তিনজনকে আটক করে। ঘটনায় যে পিস্তলটি ব্যবহৃত হয়েছে, সেই পিস্তলের লাইসেন্স আছে। ২০১৬ সালে পিস্তলটির লাইসেন্স নেওয়া হয়।


দেশে বৈধ ও অবৈধ অস্ত্রের এমন খোলামেলা ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে শীর্ষ ব্যবসায়ী এবং নানা পেশা ও শ্রেণির প্রভাবশালী মানুষের এসব অস্ত্র ব্যবহার আজকাল মামুলি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে; বিশেষ করে বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার সমাজে আরও আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। বৈধভাবে পাওয়া এসব অস্ত্র সাধারণত ব্যবহার হয় প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে। এমনকি এসব বৈধ অস্ত্র অবৈধভাবে ভাড়া দেওয়াও হচ্ছে। এসব অস্ত্র প্রকাশ্যে উঁচিয়ে মানুষকে যেমন ভয়ভীতি দেখানো হয়, তেমনি ব্যবহার হচ্ছে রাজনৈতিক গুন্ডামি, সন্ত্রাসী হামলা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জমি দখলসহ নানা অনৈতিক কাজে। গত বছরের বেশ কয়েকটি ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দলীয় কোন্দলে অস্ত্রের ব্যবহার, ক্ষমতাসীন দলের ভেতরই সীমাবদ্ধ ছিল। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে প্রতিপক্ষ দলের সঙ্গে সংঘর্ষে অস্ত্র দিয়ে যে পরিমাণ প্রাণ কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, তার চেয়ে অধিকসংখ্যক প্রাণ সংহার হচ্ছে সমমনা দলের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে। প্রায়ই বড় বড় নেতার মুখে একটি কমন বাক্য শোনা যায়, ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, আর দলের চেয়ে দেশ বড়’। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, এসব নেতার ছায়াতলে বসেই দলের নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারকে বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে আসছেন। রাজনৈতিক নেতাদের ভেতর জাতীয় ও দলীয় স্বার্থের ওপর ব্যক্তিস্বার্থ ভর করাতেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল, এর অঙ্গসংগঠন ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতা নামধারী কতিপয় ব্যক্তি অস্ত্রের জোরে যেমন নিজে দলের বিপক্ষদের কোণঠাসা করে রাখার চেষ্টা করে থাকে, তেমনি সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও