শিক্ষার্থীদের মানসিকতা ও পরিবর্তনশীল সমাজ
আপাতদৃষ্টিতে সমাজ দ্রুত পরিবর্তনশীল মনে হলেও সামাজিক পরিবর্তন প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদি। বর্তমান সময়ে সমাজের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্রে দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখা গেলেও এ পরিবর্তনগুলো দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে পরিলক্ষিত হচ্ছে। বাস্তবিক অর্থে দৃশ্যমান পরিবর্তন ও তার প্রভাব আলোচনা করতে গেলে সমাজ ও পরিবর্তন-সংশ্নিষ্ট কিছু তাত্ত্বিক বিষয়ের যোগসূত্রে আলোচনা করা প্রয়োজন। মূলত একটি সমাজের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পরিবেশ, এমনকি মনস্তাত্ত্বিকসহ সামগ্রিক পরিবর্তন দৃশ্যমান। এই দৃশ্যমান পরিবর্তনের সমন্বিত রূপই স্থানান্তর। অর্থাৎ সমাজের সামগ্রিক অবস্থার স্থানান্তর। এই দৃশ্যমান স্থানান্তরকে সমাজবিজ্ঞানী হাবার্ট স্পেনসর বলেছেন, একটি জটিল কাঠামোতে ক্রমান্বয়ে রূপান্তরিত হওয়া, যা সামাজিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সমাজের রূপান্তর বা অবস্থান্তর। এই অবস্থান্তরকে সামগ্রিক অর্থে স্থানান্তর বলা যায়। সংগত কারণেই পরিবর্তনশীলতার প্রভাবে উল্লিখিত স্থানান্তর অবস্থায় সমাজের বহুমুখী প্রভাব দৃশ্যমান। এই দৃশ্যমান প্রভাব সরাসরি শিক্ষার্থীদের মানসিকতার ওপর ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় ধরনের রেখাপাত করে। পরিবর্তনশীল সমাজে বিরাজমান সমাজ কাঠামোর পরিবর্তনসহ এ সংশ্নিষ্ট সব কার্যক্রমের এক ধরনের পরিবর্তন, মূল্যবোধ ও আদর্শের পরিবর্তন, আচরণগত পরিবর্তন, পারস্পরিক সম্পর্কের পরিবর্তন, সর্বোপরি মনোভাবের পরিবর্তন বা মানসিকতার ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব দৃশ্যমান।
পরিবর্তনশীলতার কার্যকারণ আলোচনা করতে গেলে দেখা যায়, সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত দৃশ্যমান অবকাঠামোগত উন্নয়ন, তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়ন ও সহজলভ্যতা, সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক ক্ষেত্রে বিশেষ বিশেষ উন্নয়ন, উৎপাদন খাত তথা বিদ্যুৎ, কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্যসুবিধা প্রাপ্তি, কর্মসংস্থানে জীবনযাত্রার মান, বাণিজ্য সুবিধায় অর্থনীতির গতিশীলতা ইত্যাদির প্রভাবে মানসিকতায় পরিবর্তন ও মূল্যবোধের পরিবর্তন। আবার নেতিবাচক প্রভাবে সামগ্রিক অস্থিরতা, মানসিকতার নেতিবাচক পরিবর্তন, মূল্যবোধের অবক্ষয়, মন ও মননে অস্থিরতা সৃষ্টি, সর্বোপরি মানসিকতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব। উল্লিখিত দুটি ক্ষেত্রেই কার্যকারণ সম্পর্ক বিদ্যমান। এ প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের মানসিকতার ওপর নেতিবাচক কার্যকারণ সম্পর্কীয় আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্ববহ এবং প্রয়োজনীয়। কেননা, নেতিবাচক প্রভাবগুলো শিক্ষার্থীদের মন ও মানসিকতার ওপর এক ধরনের চাপ তৈরি করে। ফলে সৃষ্টি হয় আস্থিরতার। এর প্রভাবে মূল্যবোধ হয় পরিবর্তিত। বর্তমান সমাজে তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ ও সহজ প্রাপ্তি যেমন ইতিবাচক, তেমনি এর যথাযথ ব্যবহারের বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার যদি সঠিক এবং ইতিবাচক উদ্দেশ্যে না হয়, তাহলে এর নেতিবাচক প্রভাব অবশ্যই উদ্বেগের কারণ। তথ্যপ্রযুক্তির সহজলভ্যতায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে সংশ্নিষ্ট অন্য সব ক্ষেত্রের ব্যবহার অবাধ হলে বেশ কিছু ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব অবশ্যম্ভাবী। যা কিছু ক্ষেত্রে লক্ষণীয়।
- ট্যাগ:
- মতামত
- শিক্ষার্থী
- মানসিকতা
- সামাজিক পরিবর্তন