 
                    
                    সময়, অসময় ও দুঃসময়!
খুব সম্ভবত ১৯৯৮ সালের কথা। সেই রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর টিভিরুমে তিলধারণের ঠাঁই ছিল না। কারণ সেদিন ‘টাইটানিক’ মুভিটি প্রথমবারের মতো কোনো এক টিভি চ্যানেলে দেখানো হয়েছিল। সিনেমা শেষ হওয়ার পরও তার রেশ ছিল দীর্ঘক্ষণ। পরে আড্ডায় এক বন্ধু জানতে চাইল—সিনেমার কোন বিষয়টি আমার কাছে অনবদ্য ঠেকেছে? জবাবে বলেছিলাম, এক ভয়ংকর ট্র্যাজেডিকে এত রোমান্টিকভাবে উপস্থাপন করার দক্ষতা সত্যিই অতুলনীয়। শত শত মানুষের করুণ মৃত্যুর দৃশ্যকে ছাপিয়ে এক যুগলের অকস্মাৎ ভালোবাসাই দর্শক-হূদয়কে অনেক বেশি উদ্বেলিত করেছে!
অবশ্য সেই আড্ডায় উপস্থিত অধিকাংশের মতে সেলিন ডিয়নের গাওয়া ‘মাই হার্ট উইল গো অন’ শিরোনামের থিম সংটিই ছিল ওই সিনেমার প্রাণ। শুধু সেই গানের জন্যই মুভিটি বহুবার দেখা যায়। এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার সুযোগ কম। কারণ গত আড়াই দশকে ওই গানের আবেদন এতটুকুও কমেনি। বরং প্রতিবার শোনার সময় শরীরে এক ধরনের শিহরণ অনুভূত হয়। বলতে পারেন, এসব তো জানা কথা। এগুলো আবার এত ঘটা করে বলার কী আছে?
হ্যাঁ, বলার কিছু ছিল না। তবে সেদিন সেলিন ডিয়নের এক ভিডিও দেখে স্তব্ধ হয়ে গেলাম। লাইভে এসে জানালেন, সম্প্রতি তিনি এক বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। সে রোগে তার সবচেয়ে দামি সম্পদটি হারাতে বসেছেন। অর্থাৎ অসুখের প্রভাবে তিনি আর গান গাইতে পারবেন না। এমনকি রোগের প্রকোপ এভাবে বাড়তে থাকলে হয়তো একসময় আর বাকযন্ত্র ব্যবহার করে স্বাভাবিক কথাও বলতে পারবেন না!
বিষয়টা ভাবা যায়? যার লাইভ কনসার্টে লাখ লাখ মানুষ কণ্ঠ মেলায়, পারফরম্যান্স চলাকালে তারা হয়ে পড়ে সম্মোহিত। তার ইউটিউব ভিডিওগুলোয় সহজেই মিলিয়ন ভিউ হয়। অথচ সে মানুষটা আর কখনো গান করতে পারবে না! তাছাড়া দীর্ঘদিন ক্যান্সারে ভুগে তার স্বামী প্রয়াত হয়েছেন ক’বছর আগে, সদ্য হারিয়েছেন তার ভাইকে। সাধারণ একজন মানুষের কাছে ওই রোগ শুধুই শারীরিক অসুস্থতা। কিন্তু তার ক্ষেত্রে শরীরের চেয়ে মনের ওপর এর প্রভাব অনেক বেশি হওয়ার কথা, তাই না?
গোটা দুনিয়া তাকে যে সম্পদের জন্য চেনে, আয়ের একমাত্র উৎস, সেটা আকস্মিক অকেজো হয়ে গেল! আগামী দুই বছর যত ট্যুর এবং কনসার্টের সিডিউল ছিল তিনি সেগুলো বাতিল করলেন। সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া চাইলেন। দৃশ্যটা দেখার সময় ভাবছিলাম, তাকে সুস্থ করতে যদি এক মিলিয়ন ডলারের দরকার হয় তা একদিনে জোগাড় করা সম্ভব। এমনকি এক বিলিয়ন ডলার দরকার হলেও তা সংগ্রহ করা অসম্ভব নয়। তার পরও চিকিৎসকেরা খুব একটা আশার আলো দেখাতে পারছেন না! এখান থেকে কিছু কী শেখা যায়?
 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                