জামিনের রাজনীতি, সরকারের ভূমিকা
কয়েক বছর আগে আমি হাইকোর্ট থেকে একটি মামলায় আগাম জামিন পাই। মামলাটি করা হয় কুখ্যাত ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে। এ দেশে এসব মামলার প্রায় অবধারিত পরিণতি হচ্ছে নিম্ন আদালতে জামিন না পাওয়া এবং দোষী প্রমাণিত হওয়ার আগেই কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত অন্তরীণ থাকার শাস্তি ভোগ করা।
শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শে আমি তাই হাইকোর্টের শরণাপন্ন হই, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখিয়ে সেখান থেকে আগাম জামিন পাই। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার কিছুদিন পরেই শুনি এই জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার জজের কাছে আপত্তি জানিয়েছে। নির্ধারিত দিনে আদালতে গিয়ে অবাক হয়ে দেখি স্বয়ং অ্যাটর্নি জেনারেল দাঁড়িয়েছেন আমার মতো এক সামান্য মানুষের জামিন বাতিল করার জন্য! আমার অবশ্য ভাগ্য ভালো, চেম্বার জজ আমার জামিন বহাল রাখেন।
আমার মতো ভাগ্য সবার হয় না। বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলার ক্ষেত্রে এমন ঘটনা খুব কম ঘটে। অনেক সময় চেম্বার জজ বরং এসব মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তা আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চের কাছে পাঠিয়ে দেন। বিএনপির দুই শীর্ষস্থানীয় নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসের ক্ষেত্রে মাত্র কয়েক দিন আগে তা-ই ঘটেছে।
বিএনপির এই দুই নেতাকে যে মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, সেখানে এজাহারেই তাঁদের নাম ছিল না। তারপরও তাঁদের জামিনের আবেদন নিম্ন আদালতের দুই স্তরে কয়েকবার নামঞ্জুর করা হয়। সব জেনেশুনে হাইকোর্ট এরপর তাঁদের ছয় মাসের জন্য জামিন দেন। আমরা সবাই জানি, সুপ্রিম কোর্টের দুটো বিভাগের একটি হচ্ছে হাইকোর্ট বিভাগ, অন্যটি আপিল বিভাগ।
এর মানে হচ্ছে হাইকোর্ট নিজেই সর্বোচ্চ আদালতের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই সর্বোচ্চ আদালতের সামান্য এক জামিন দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আপত্তি জানিয়ে অন্তত কয়েক দিনের জন্য আটকে দিয়েছে মির্জা ফখরুলদের মুক্তিলাভের সম্ভাবনা। সেখানে জামিন না পেলে এজাহারে নাম নেই, এমন এক প্রশ্নবিদ্ধ মামলায় তাঁদের কারাগারে থাকতে হবে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য।