আবার কি পরীক্ষাগারে শিক্ষা-শিশু?
স্কুল পর্যায়ে গতানুগতিক সিলেবাস, পাঠ্যপুস্তক, শিখন কৌশল ও পরীক্ষাপদ্ধতি নিয়ে দারুণ অস্বস্তি রয়েছে দেশবাসীর। আর সব সীমাবদ্ধতা ও অস্বস্তির ফাঁক দিয়ে প্রায় অনিবার্যভাবেই যেন ঢুকে পড়ে কোচিং ও গাইড বই ব্যবসা। ফলে জ্ঞানচর্চা নিয়ে প্রজন্মের বেড়ে ওঠার পথ বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। ১৯৯৬ সালে কারিকুলামে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এনসিটিবির মাধ্যমে বিষয় বিশেষজ্ঞদের নিয়ে নতুন পাঠ্যসূচিতে পাঠ্যপুস্তক রচিত হতে থাকে। একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা তখন হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু শক্তিমান নানা মুনির হস্তক্ষেপে তা সবলভাবে দাঁড়াতে পারেনি। আবার পরীক্ষাগারে নিয়ে আসার চেষ্টা চলে ২০১১ সালে। ২০১০-এর শিক্ষানীতির আলোকে নতুনভাবে কারিকুলাম তৈরি করা হয় মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে। এর মধ্যে ওএমআর শিটে বৃত্ত ভরাট পরীক্ষাপদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান আহরণ থেকে আবার ছিটকে ফেলা হলো। এলো বিদেশি ফর্মুলার ভুল প্রয়োগে সৃজলশীল মূল্যায়ন পদ্ধতি। এতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক কতটা সফলভাবে নিজেদের সৃষ্টিশীলতার প্রকাশ ঘটাতে পারলেন জানি না, তবে গাইড বই ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন দরজা খুলে গেল। হঠাৎ আমাদের বিস্মিত আর আতঙ্কিত করে শিক্ষার্থী শিশুদের ঢুকিয়ে দেওয়া হলো পিইসি ও জেএসসির মতো দুটি পীড়াদায়ক অপ্রয়োজনীয় পাবলিক পরীক্ষায়। অভিভাকদের ফেলা হলো নতুন করে অস্বস্তি ও অর্থকষ্টে। এভাবে পরীক্ষাগারে একের পর এক পরীক্ষা ব্যর্থ হতে লাগল। এমন এক বাস্তবতায় সম্প্রতি নতুনভাবে আমূল সংস্কারের সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হলো স্কুল শিক্ষার ক্ষেত্রে।
আমি প্রথমে সিদ্ধান্তটিকে স্বাগত জানাতে চাই। এত দিনে সম্ভবত একটি যৌক্তিক পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার কারিকুলাম ও শিখন ক্ষেত্র এবং মূল্যায়ন পদ্ধতিতে। এত দিনের চলমান পদ্ধতি নিয়ে সব মহলেই অস্বস্তি ছিল। এবার এই অস্বস্তি থেকে বেরিয়ে আসার প্রকৃত পথ তৈরি হলো কি না, তা দেখার বিষয়। পত্রিকায় প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ মতামত ও নানা প্রকাশিত প্রতিবেদন পড়ে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করি। এটুকু বুঝতে পারি, অনেক বছর ধরে আমরা যে চাওয়া-পাওয়ার কথা লিখেছি, যেসব পরামর্শ রাখার চেষ্টা করেছি, তা-ই যেন বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য ছিল, শিশু শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার্থী বানানোর ভয়ংকর খেলা থেকে বের করে প্রকৃত শিক্ষার্থীর জায়গায় নিয়ে আসা। এর একটি সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি নতুন ব্যবস্থাপনায়।