কূটনীতি ও মার্কিন রাষ্ট্রদূতের তৎপরতা
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ১৪ ডিসেম্বর সকালে ঢাকার শাহীনবাগে নিখোঁজ বিএনপির নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাড়ি পরিদর্শন শেষে বেরিয়ে আসার সময় বাইরে একদল মানুষ তাঁকে ঘিরে ধরার চেষ্টা করে। এরপর তিনি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
সুমন ২০১৩ সাল থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। তাঁর পরিবারের দাবি, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য তাঁকে তুলে নিয়ে গেছেন। তাঁর বোন সানজিদা ইসলাম গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সমন্বয়কারী। তিনি জানান, মার্কিন রাষ্ট্রদূত যখন তাঁদের বাসায় যান, তখন বাইরে ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ‘মায়ের কান্না’ নামের আরেকটি সংগঠনের কিছু ব্যক্তি। ‘মায়ের কান্না’ ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের ফাঁসি, কারাদণ্ডের শিকার ও চাকরিচ্যুত সদস্য এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সংগঠন।
এই ঘটনার পর মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বাংলাদেশে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক বিরোধও চলছে।
প্রশ্ন উঠেছে কূটনীতিকদের অধিকারের সীমা নিয়ে। তাঁদের কর্মতৎপরতা নিয়ে। একজন রাষ্ট্রদূত বিদেশি নাগরিক। তিনি চাইলেই বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক নেতার মতো চলাফেরা করতে পারেন না। ইচ্ছে হলেই কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর পক্ষে বক্তব্য রাখতে পারেন না। আবার ইচ্ছে হলেই কোনো দলের বিপক্ষে অবস্থান নিতে পারেন না। তাঁকে সব দল ও গোষ্ঠীর সঙ্গে সমান সদ্ভাব নিয়ে চলতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে দায়িত্ব পালনকারী অনেক কূটনীতিক ফ্রি-স্টাইলে চলেন, ফ্রি-স্টাইলে কথা বলেন। তাঁদের কথা ও তৎপরতা অনেক ক্ষেত্রেই সব রকম কূটনৈতিক শিষ্টাচার ও শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে যায়।
এর জন্য অবশ্য রাজনৈতিক নেতৃত্বই দায়ী। আমাদের দেশে বিরোধী দল নিজের শক্তির ওপর আস্থাশীল নয়। তারা কূটনীতিকদের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি মনে করে। কূটনীতিকদের কাছে সব সময় সরকারের বিরুদ্ধে নালিশ করে। সরকারও নিজেদের নানা দুর্বলতা ঢাকতে কূটনীতিকদের সমীহ করে চলে। ফলে কূটনীতিকেরা নিজেদের ‘নিধিরাম’ ভাবা শুরু করেন; যা কূটনীতির মূল দর্শনের সঙ্গে মোটেও সংগতিপূর্ণ নয়।