‘মামলা জটে’ বড়দিনের আনন্দ নেই তাদের ঘরে
৪০ বছর বয়সী লবিংসন সুমের কোনো রকমে টেনেটুনে ৬ সদস্যের সংসার চালান। তার পরিবারে আছে ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে সন্তানদের লেখাপড়া করাচ্ছেন। কিন্তু, ১৩ বছরে পুঞ্জিপ্রধান হিসেবে বন বিভাগের ৭টি মামলার খরচ চালাতে গিয়ে একপ্রকার নিঃস্ব হয়ে গেছেন তিনি।
তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একেকটা মামলার নিষ্পত্তি হতে ৩-৪ বছর লেগে যায়। এখনো ৩টা মামলা চলছে। আমার ২ ছেলে পড়ত। মামলার খরচ টানতে গিয়ে তাদের লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে হয়েছে। আমরা তো অসহায় হয়ে পড়েছি।'
সেখানকার প্রবীণ সদস্য প্রবিন নকরেক জানান, 'বন বিভাগের কর্মকর্তারা' সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের নামে আশপাশের প্রভাবশালী বাঙালিদের সহায়তায় খাসিদের পানজুম দখলের চেষ্টা করে। আবার উল্টো খাসিদের বিরুদ্ধে কিছু দিন পরপর মামলা দিয়ে সর্বস্বান্ত করা হচ্ছে। খাসিদের 'ভোগদখলের জায়গায়' বনায়ন হলেও তাদের উপকারভোগী করা হচ্ছে না, নাম লেখাচ্ছেন দখলে সহায়তাকারী প্রভাবশালীরাই।
চাঁদার জন্য নিয়মিত হুমকি আসে অভিযোগ করে কয়েকজন বলেন, চাঁদা না দিলেই 'মিথ্যা ও হয়রানিমূলক' মামলা দেওয়া হয়। গত বছর উত্রামের (স্থানীয় ভাষায় ভাইরাসকে তারা উত্রাম বলেন) সংক্রমণে বেশির ভাগ পান নষ্ট হয়ে যায়। আর এ বছর সিলেট অঞ্চলের বন্যায় কমে গেছে পানের দাম। তবে, উত্রাম কিংবা বন্যা লবিংদের কাছে ছোট সমস্যা, কারণ তাদের জীবনে আরও বড় সমস্যার তৈরি করছে বনবিভাগের মামলা, আর প্রভাবশালীদের লোভ।
প্রবিন নকরেক জানান, পুঞ্জিতে অর্ধশত খাসি পরিবারের বসবাস, যারা বংশ পরম্পরায় পানসহ বিভিন্ন বনজ-ফলজ চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। কিন্তু, তাদের ভোগদখলে থাকা পানজুমের জায়গাকে 'ঘটনাস্থল' হিসেবে দেখিয়ে গাছ-বাঁশ কাটা কিংবা চুরির মতো অভিযোগে গত এক যুগে ১৫টি মামলা করেছে বন বিভাগ। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে পুঞ্জিবাসীদের।