কূটনৈতিক শিষ্টাচার যেন ভুলে না যাই
হঠাৎ করেই যেন বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি অনভিপ্রেত কূটনৈতিক বিতণ্ডা শুরু হয়েছে। ঘটনার শুরু রাজধানীতে বিরোধী দলের এক নিখোঁজ নেতার বাসভবনে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সৌজন্য সাক্ষাৎকার থেকে। সে সময় কূটনৈতিক নিরাপত্তা অগ্রাহ্য করে সরকারদলীয় সমর্থনপুষ্ট কিছু ব্যক্তি এই সাক্ষাতের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর ব্যক্তিগত উদ্বেগ জানাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস থেকে এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতেও সে কথা জানানো হয়। পরে ওয়াশিংটনে স্টেট ডিপার্টমেন্টের উচ্চপর্যায় থেকে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ সরকারের গোচরে আনা হয়।
বিষয়টি এ পর্যন্ত থাকলে এই বিতণ্ডা পুকুরে নুড়ি ছোড়া ভিন্ন অন্য কিছুই হতো না। কিন্তু সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও দলীয় কর্মকর্তারা বিষয়টিকে একটি রাজনৈতিক বিতর্কে পরিণত করেন। তাঁরা অভিযোগ তোলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। দু-একজন নেতা বিদ্রূপাত্মক মন্তব্য করেন। এই দুই দেশের সম্পর্কে চিড় ধরেছে এই অনুমান থেকে ঢাকার রুশ দূতাবাস বিষয়টিতে নাক গলানোর চেষ্টা করে। তারা এক লম্বা বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপকে আধিপত্যবাদী বৈশ্বিক রাজনীতির প্রকাশ বলে অভিযোগ করে। তারা জানায়, বাংলাদেশসহ অন্য যেকোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করতে রাশিয়া বদ্ধপরিকর। এই প্রতিশ্রুতি এমন এক সময়ে দেওয়া হয়, যখন মস্কো প্রতিবেশী ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসী যুদ্ধে লিপ্ত ও সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে সরাসরি যুক্ত। একই সময় ক্রেমলিন সমর্থিত ভাগনার কোম্পানির ভাড়াটে সৈন্যরা আফ্রিকার একাধিক দেশে ভয়াবহ তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে।
মাত্র কয়েক মাস আগেই বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের অর্ধশতক উদ্যাপন করেছে। এ উপলক্ষে দুই দেশই তাদের বিদ্যমান সম্পর্কের ব্যাপারে গভীর সন্তোষ প্রকাশ করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন এক বিবৃতিতে এমন কথাও বলেন, পরবর্তী ৫০ বছর বা তারপরও এই দুই দেশের চলতি সৌহার্দ্য অব্যাহত থাকবে।