পুঁজিবাজারের দুরবস্থার কারণ ফ্লোর প্রাইস
আগে মনে করা হতো যে পৃথিবীতে সম্পদ-অর্জন প্রচেষ্টা হলো একটা জিরো-সাম-গেম; অর্থাৎ সম্পদের পরিমাণ নির্ধারিত, একজনের কিছু সম্পদ অর্জনের অর্থ হলো আরেক জনের সমপরিমাণ সম্পদের বিয়োজন। সেজন্য তখন সম্পদ জবরদখল ও লুটপাটের ওপর বেশি গুরুত্ব ছিল। কিন্তু ব্যাংকব্যবস্থা প্রবর্তনের পর দেখা গেল যে, বিনিয়োগের ফলে সম্পদ বৃদ্ধি পায়; কেকের সাইজ বড় হয়ে যায়। ফলে সংশ্লিষ্ট সবাই সেটার বড় অংশের ভাগীদার হতে পারেন। আরও পরে দেখা গেল যে, ব্যাংকঋণের চেয়েও আরেকটি ভালো বিনিয়োগ মাধ্যম রয়েছে, যার সুবিধা অনেক বেশি। পুঁজিবাজার হলো সেই মোক্ষম হাতিয়ার। বিনিয়োগ, কর্ম-সৃজন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে এর গুরুত্ব অনেক বেশি। সে কারণে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারকে একটা দেশের অর্থনীতির ব্যারোমিটার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
পুঁজিবাজারের সুবিধা হলো এই যে, এখান থেকে কোনো কোম্পানি সুদ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা ছাড়াই প্রয়োজনীয় পুঁজি সংগ্রহ করতে পারে। ফলে কোম্পানির আর্থিক দায় ও চাপ কম থাকে। তাছাড়া, ব্যাংক স্বল্পমেয়াদি আমানত গ্রহণ করায় দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ প্রকল্পে তার পক্ষে বিনিয়োগের পরিমাণ ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ানো সম্ভব হয় না। মন্দ ঋণের পাহাড় গড়ে ওঠায় আমাদের দেশে ব্যাংকের সক্ষমতা আরও কম। কিন্তু পুঁজিবাজারের এই সীমাবদ্ধতা নেই; অসংখ্য ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ বিনিয়োগকারী আমানতের সুদের চেয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে অধিক লভ্যাংশ ও মূলধনী মুনাফার প্রত্যাশায় হুমড়ি খেয়ে পড়েন। ফলে বিনিয়োগের জন্য সম্পদ সংস্থান সহজ হয়। সাধারণ মানুষের করপোরেট বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের মধ্যে মালিকানার স্বত্ববোধ জাগ্রত হয় এবং সম্পদের সুষম বণ্টনের ক্ষেত্র অবারিত হয়। এ বাজারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো তারল্য; যে কোনো সময় যে কোনো পরিমাণ ইকুইটি বিক্রি করে যেমন ক্যাশ করা যায়, তেমনি যে কোনো পরিমাণ ক্যাশ যে কোনো সময় বিনিয়োগ করে মালিকানার অংশীজন হওয়া যায়; বিনিয়োগের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাও করা যায় বহুমুখী। এই সব সুবিধার পটভূমি নিয়ে ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্র্তৃক ১৬০২ সালে আমস্টারডামে প্রথম স্টক একচেঞ্জ প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্থনৈতিক উন্নয়নে এর গুরুত্ব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে। কিন্তু স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরও আমাদের পুঁজিবাজার শৈশব অবস্থায়ই রয়ে গেছে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- পুঁজিবাজার
- ফ্লোর প্রাইস