দেশে পর্যাপ্ত আইন আছে, সেই সঙ্গে নীতিমালা। কিন্তু এসব নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না সংশ্নিষ্টরা। নিয়ম ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্বপ্রাপ্তদের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। তবে কোনো কোনো সময় দায়িত্বপ্রাপ্তদের বাস্তববাদী হতে দেখা যায়। তাঁরা প্রতিকারের আশ্বাস দেন। কিন্তু তা কেন আলোর মুখ দেখে না, সেটি আমরা বুঝি। এর সর্বশেষ নজির দেখা গেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।
সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি আলোড়ন তুলে ইতোমধ্যে থিতিয়েও গেছে। কিন্তু গত ২ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আজহার জাফর শাহ নামে একজন পদচ্যুত শিক্ষকের প্রাইভেটকারের চাপায় রুবিনা আক্তার নামে এক গৃহবধূর প্রাণহানি অনেক প্রশ্ন রেখে গেছে। সংবাদমাধ্যমে দেখেছি, ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুকে 'হত্যাকাণ্ড' বলে আখ্যায়িত করেছেন। ঘটনার রাতে শাহবাগ থানায় সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেছেন- সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী শাস্তির বিধান রয়েছে। এ আইনে যাতে অভিযুক্ত শিক্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি হয়, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা সেই সর্বোচ্চ শাস্তি দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
অভিজ্ঞতা বলে, এসব দুর্ঘটনার বিচারে দীর্ঘসূত্রতার কারণে ভুক্তভোগীরা মামলায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। তা ছাড়া ঘটনার পরপর সংবাদমাধ্যম ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপরতা দেখালেও কিছুদিন পর সবাই নীরব হয়ে যায়। এমন হতে পারে, লম্বা প্রক্রিয়ার কারণে তারা নতুন ইস্যুতে চলে যায়। দেশে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির বাধ্যবাধকতা রয়েছে সেখানে। রুবিনার মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করার সুযোগ থাকলে ভেবে দেখা যেতে পারে।
রুবিনার মৃত্যু খুবই অমানবিক ও মর্মান্তিক। কিন্তু এটাও সত্য, গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ঘটে। ব্যক্তিগত গাড়ির তুলনায় গণপরিবহন দুর্ঘটনায় বেশিরভাগ মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যু সাধারণত মহাসড়কে দূরপাল্লার যাত্রায় হয়ে থাকে। ঢাকা মহানগরীতেও কয়েকটি দুর্ঘটনা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। এর মধ্যে রয়েছে রমিজ উদ্দিন স্কুলের শিক্ষার্থী এবং গুলিস্তানে সিটি করপোরেশনের গাড়ির নিচে চাপা পড়ে নটর ডেম কলেজছাত্রের মৃত্যু। এমনকি রুবিনার দুর্ঘটনার কাছাকাছি স্থান শাহবাগ মোড়ে বাসচাপায় বেশ কয়েক বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাম্মী আক্তার হ্যাপীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর স্মৃতিতে রোকেয়া হলে ভাস্কর্যও নির্মিত হয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের বিচার হয়েছে কিনা, জানা নেই। এ বিচার না হওয়া বা হলেও সেই খবর প্রচার না হওয়া বড় সমস্যা। বিচারহীনতার সংস্কৃতি অব্যাহত থাকলে চালক-সহকারী এমনকি মালিক; কারও মধ্যে বিবেকবোধ জাগ্রত হবে না।