দারিদ্র্য হ্রাস ও আয় বাড়াতে ক্ষুদ্র ঋণ
বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষিপ্রধান। আমাদের দেশের জনসংখ্যার ৬৭ শতাংশ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষি কার্যক্রমের ওপর নির্ভরশীল। যদিও আমরা শিল্পায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এভাবে দেশের মোট অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে কৃষি বিভাগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। এটি খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তা, দারিদ্র্য হ্রাস এবং আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত একটি অপরিহার্য খাত। আর এ কৃষি খাত উন্নয়নে তাত্পর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ক্ষুদ্র ঋণ। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং হলো গ্রামীণ এবং কৃষি অর্থায়ন, যা আর্থিক ব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়নে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
অন্যদিকে গ্রামীণ অর্থায়ন বলতে তহবিল সংগ্রহ এবং পুলিংয়ের পাশাপাশি গ্রামীণ জনগণ, বিশেষ করে কৃষককে গ্রামীণ এলাকায় অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমের সঙ্গে তাদের আর্থসামাজিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য নগদ অর্থ দেয়াকে বোঝায়। গ্রামীণ ফাইন্যান্সের মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অনানুষ্ঠানিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রামীণ দরিদ্রদের একাধিক আর্থিক সুবিধা দিয়ে থাকে। এছাড়া অন্যান্য ছোট ও মাঝারি গ্রামীণ সংস্থা এবং কৃষি প্রক্রিয়াকরণ সংস্থাগুলো আরো উল্লেখযোগ্য আর্থিক পরিষেবা দেয়। ক্ষুদ্র ঋণ সাধারণত গ্রামীণ বা অনুন্নত এলাকার দরিদ্র বা কৃষকের কাছে কোনো জামানত ছাড়াই ছোট ঋণের আকারে ঋণ প্রসারিত করার একটি মাধ্যম।
গ্রামীণ ও কৃষি অর্থ এখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য হ্রাসের জন্য আর্থিক ব্যবস্থার বিকাশের প্রধান ক্ষেত্র হিসেবে সর্বজনীন স্বীকৃত। সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল বিশ্বের দরিদ্রদের চাহিদা পূরণ না করে অর্জন করা সম্ভব না। দরিদ্র্য মানুষ যাদের অধিকাংশই এখনো গ্রামীণ অঞ্চলে বসবাস করে। গ্রামীণ এলাকায় অর্থ ব্যবহার করে বিনিয়োগ, খরচ, ঝুঁকিব্যবস্থাপনা এবং ধাক্কা মোকাবেলা সবই উন্নত করা সম্ভব।
ব্র্যাক বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ক্ষুদ্র ঋণ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। তাদের এক গবেষণায় ক্ষুদ্র ঋণ এবং দারিদ্র্য হ্রাসের মধ্যে যোগসূত্র আবিষ্কার করা হয়েছে। এ গবেষণার মূল বিষয় হলো ক্ষুদ্র ঋণ এমন অনেক সমস্যা দূর করতে সাহায্য করতে পারে, যা একটি জনবহুল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখে। যখন একটি পরিবার তাদের ফেরত দেয়ার সামর্থ্যের চেয়ে বেশি ধার নেয়, তখন এটি তাদের দারিদ্র্য থেকে বাঁচার ক্ষমতার ওপর আরো বেশি প্রভাব ফেলে।
ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট (আইএফএডি) অনুসারে গ্রামীণ উন্নয়নে প্রাথমিকভাবে মনোনিবেশ করলেই বৈশ্বিক দারিদ্র্য হ্রাস সম্ভব। বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংক ক্ষুদ্র ঋণ আন্দোলনের অগ্রণী ভূমিকায় রয়েছে। দারিদ্র্য দূর করতে দরিদ্রদের ঋণদানের সম্ভাব্যতা প্রদর্শন করতে হবে, যা নিম্ন আয়ের ব্যক্তিদের ঋণ দেয়ার খরচ এবং ঝুঁকি কমায়। বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি এখন বিশ্বে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের বেশকিছু মডেল বিশ্বব্যাপী চালু হয়েছে। যদিও প্রোগ্রামগুলো ঋণগ্রহীতাদের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করে। বৈজ্ঞানিকভাবে এ ধরনের সুবিধাগুলো মূল্যায়নের জন্য সামান্য চেষ্টা করা হয়েছে। যেসব পরিবারে ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে ঋণ নেয়ার বিকল্প রয়েছে, তাদের খাবার, কেনাকাটা করার বা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর সম্ভাবনা কম।