ব্লাড ক্যানসারে আশার আলো
যুক্তরাজ্যের লেস্টার শহরের ১৩ বছরের এলিসা ভুগছিল প্রাণঘাতী ব্লাড ক্যানসারে। গেল বছর মে মাসে তার শরীরে এই মরণব্যাধির অস্তিত্ব শনাক্ত হয়। এরপর দেড় বছর ধরে কেমোথেরাপি, বোনম্যারো প্রতিস্থাপনসহ প্রচলিত সব ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয় তাকে। কিন্তু এতেও কোনো উন্নতি হচ্ছিল না। এ পরিস্থিতিতে এলিসার ক্যানসার সারাতে পরীক্ষামূলক নতুন একটি পদ্ধতি প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি গতকাল রবিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতালের চিকিৎসকরা এলিসার চিকিৎসায় ‘বেস ইডিটিং’ পদ্ধতি ব্যবহার করে। এ থেরাপিটি মাত্র ছয় বছর আগে উদ্ভাবন করা হয়। এলিসাই বিশ্বের প্রথম রোগী যাকে এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হয়েছে। আর এ চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগে ‘যুগান্তকারী’ সাফল্য পাওয়া গেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কিশোরী এলিসা আপাতত ক্যানসারমুক্ত। ছয় মাস আগে এ চিকিৎসা পদ্ধতি এলিসার ওপর প্রয়োগ করা হয়। এখন তার শরীরে ক্যানসার নেই। তবে আবার ফিরে আসে কি না এ জন্য তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
কয়েক বছর আগেও ক্যানসার চিকিৎসায় এমন বিষয় অকল্পনীয় ছিল। তবে জেনেটিকস বা বংশগতিবিদ্যার অবিশ্বাস্য উন্নতির ফলে এখন চিকিৎসা সম্ভব হয়ে উঠেছে। মানুষের শরীরের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণকারী ডিএনএর ‘বেস’কে বলা হয় জীবনের ভাষা। এ বেসকে মানবদেহের জেনেটিক কোডের ভিত্তি বলা হয়। এ কোডের যেকোনোটিতে কোনো কোনো পরিবর্তনের জন্য ক্যানসার কোষ তৈরি হয়। বেস এডিটিং পদ্ধতিতে পরিবর্তিত ওই কোডের জায়গায় স্বাভাবিক কোড প্রতিস্থাপন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে ক্যানসার কোষ তৈরিকারী কোড নিষ্ক্রিয় হয়। মূলত এ পদ্ধতি ব্যবহার করেই এলিসার ক্যানসারের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ থেরাপি একেবারেই নতুন। তবে নতুন এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা নিতে সম্মতি জানায় এলিসা। গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতালের অধ্যাপক ওয়াসিম কাশিম বলেন, ‘এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে চিকিৎসা দেওয়া বিশ্বের প্রথম রোগী হলো এলিসা। জেনেটিক বিষয় নিয়ে ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার এ বিজ্ঞানে দ্রুত উন্নতি ঘটছে। এ পদ্ধতিতে বিভিন্ন রোগ সারিয়ে তোলার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।’