একজন নিরীহ পথচারীর মৃত্যু ও গোলাপবাগে হতাশার চাষ
১০ ডিসেম্বরের পরে কী হবে? বিএনপির একজন সাবেক সংসদ সদস্য এবং এককালে সক্রিয় নেতাকে একটি টিভি চ্যানেলের সঞ্চালকের এই প্রশ্নে তিনি সহাস্যে বলেছিলেন, ‘কী আর হবে ১১ ডিসেম্বর আসবে!’ সত্যিই তাই, ১১ ডিসেম্বর এসেছে এবং দেশ যথারীতি তার পুরোনো ছন্দে ফিরে গেছে। অথচ এই ১০ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে বিগত দুটি মাস কী ভয়ংকর আতঙ্কই না তৈরি করা হয়েছিল জনমনে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও এ দেশের রাজনীতি ও রাজনীতির ধরন যে একটুও বদলায়নি এবং এখনও যে রাজনীতির একমাত্র পুঁজি সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত করা– তা আরও একবার প্রমাণিত হলো।
১০ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে আতঙ্ক সৃষ্টির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল যখন বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এলিট প্রতিষ্ঠান র্যাব-এর ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় এবং বিএনপি ও সমমনা দলগুলো সরকার-বিরোধিতার একটি মওকা পেয়ে বসে। হয়েছিল তাই। সারা দেশে একগুচ্ছ দাবি নিয়ে বিএনপি সমাবেশ আয়োজন করে এবং সেখানে অভাবনীয় জনসমাবেশ ঘটতে শুরু করে। সে সময়ই ১০ ডিসেম্বরকে বেছে নেওয়া হয় সরকার পতনের জন্য চূড়ান্ত রূপরেখা ঘোষণার তারিখ হিসেবে। কিন্তু বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোর নেতাকর্মীরা ১০ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে যে গুজবটি সফলভাবে প্রচার করতে সক্ষম হয় তা হলো, ১০ ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য কয়েকটি শক্তিশালী পশ্চিমা দেশ থেকে সরকারের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আসবে। যেহেতু ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস সেহেতু এই দিবসকেই বেছে নেওয়া হবে বাংলাদেশের ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার জন্য। আর বিএনপি নেতৃত্বের কার্যত মারমুখী অংশ এই দিনটিতে ঢাকা দখল, তারেক জিয়ার প্রত্যাবর্তন এবং সর্বোপরি দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়েও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ বদান্যতায় মুক্ত থাকা বেগম খালেদা জিয়াকে সমাবেশে হাজির করার ঘোষণা দিয়ে বসেন। বিএনপি নেতৃত্ব ক্রমাগত বলতে থাকেন যে ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে দেশ পরিচালিত হবে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার নির্দেশে।
ফলে সরকারও নড়েচড়ে বসে এই দিনটিকে কেন্দ্র করে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়ে এই দিনটিকে নিয়ে সরকার তথা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও চরম উসকানিমূলক বক্তব্য আসতে থাকে। একথা সত্য যে সংসদে গুরুত্বহীন বিএনপিকে আওয়ামী লীগ সরকার কখনোই ‘গুরুত্বহীন’ হতে দেয়নি। বিগত ১৪ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতিকদের বক্তব্যে, বিরোধিতায় ও আচরণে বাঁচিয়ে ও টিকিয়ে রেখে আওয়ামী লীগ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে কী দেয়নি সে হিসাব সময় করবে কিন্তু এ কথাও সত্য যে বিএনপি ১০ জানুয়ারি নিয়ে এক পা এগোনোর বক্তব্য দিলে সরকারপক্ষ তিন পা এগিয়ে নিয়ে গেছে দিনটিকে ঘিরে উত্তেজনা তৈরিতে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বিএনপির সমাবেশ
- পথচারীর মৃত্যু