রণক্লান্ত খান সাহেব ও পাকিস্তান সেনাবাহিনী

কালের কণ্ঠ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার প্রকাশিত: ০৮ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:২১

বরাবরের মতোই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কলকাঠির চালে সংঘটিত অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক মেরুকরণের ফলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তাঁর দল এ বছরের এপ্রিল মাসে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হয়। কেন্দ্র থেকে ক্ষমতাচ্যুত হলেও পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ক্ষমতায় বহাল আছে। নিজ প্রভুর এমন আচরণে বেজায় খেপে যান জনাব খান সাহেব এবং হুংকার ছাড়েন এবার তিনিও দেখে নেবেন। হুংকার বাস্তবায়নে ইমরান খান নিজ দল পিটিআইয়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে মাঠে নেমে পড়েন এবং পাকিস্তানব্যাপী গণ-আন্দোলনের ডাক দেন।


ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ইমরান খানের হুংকার ও হুমকি-ধমকি এবং তাঁর সঙ্গে বিপুলভাবে জনগণের রাস্তায় নেমে আসা দেখে অনেকের মনে হয়েছিল, এবার তাহলে বোধ হয় সামরিকতন্ত্র ও সামরিক রাজনীতির কবল থেকে পাকিস্তান মুক্ত হতে চলেছে। এটা যদি হয়, তাহলে শুধু যে পাকিস্তানের ভাগ্য পরিবর্তন হবে তা নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে বিশাল সম্ভাবনাময় পরিবর্তন ঘটবে এবং বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতিতেও তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ ভারত বিভক্তির পর গত ৭৫ বছর শুধু পাকিস্তানের রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সামরিক বাহিনীর পরিপূর্ণ কর্তৃত্ব থাকায় আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক সহযোগিতার ক্ষেত্রটি সম্প্রসারিত হতে পারেনি। পাকিস্তানের কারণেই বিপুল সম্ভাবনাময় সার্ক আজ মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। তাই যদিও সেনাবাহিনীর সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় ইমরান খানের রাজনৈতিক উত্থান, তার পরও পাকতুনখোয়াসহ ক্ষমতাশালী পাঞ্জাব প্রদেশে নিজ দলের সরকার থাকায় এবং ইসলামাবাদমুখী লং মার্চে জনসমাবেশের দৃশ্য দেখে মানুষের ধারণা হয়েছিল, এবার বোধ হয় একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন পাকিস্তানে ঘটতে যাচ্ছে। কিন্তু ইসলামাবাদ নয়, রাওয়ালপিন্ডি পর্যন্ত পৌঁছে চুপচাপ গলা নামিয়ে লং মার্চের সমাপ্তি ঘোষণার মাধ্যমে রণে ভঙ্গ দিয়ে ইমরান খান ঘরে ফিরে গেছেন। তাই আপাতত পাকিস্তানের পরিস্থিতি ব্যাক টু স্কয়ার  ওয়ান অর্থাৎ যুদ্ধে আগের মতো এবারও পাকিস্তানি জনগণের পরাজয় এবং সেনাবাহিনীর বিজয় ঘটেছে।


‘পাকিস্তান দ্য গ্যারিসন স্টেট’ গ্রন্থের লেখক পাকিস্তানি নাগরিক ও সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. ইশতিয়াক আহমদ সম্প্রতি এক আলোচনায় বলেছেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিজ দেশের জনগণকে পরাস্ত এবং নিজ দেশকে একাধিকবার দখল করতে পারলেও ভারতের সঙ্গে সংঘটিত সব যুদ্ধে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছে এবং একাত্তরে সেনাতন্ত্রের কারণেই পাকিস্তানের একাংশের কবরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামের স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে, যে বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে পাকিস্তানের চেয়ে সব দিক থেকে এগিয়ে আছে। তাই ইমরান খানের লং মার্চের ফলে পাকিস্তানের রাজনীতিক সচেতন মানুষ, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণি ও মিডিয়ার একটি বড় অংশ ইমরান খান ও তাঁর দলের প্রতি সন্তুষ্টি বা তাঁকে পুনরায় ক্ষমতায় আনার জন্য নয়, বরং এই সুযোগে রাজনীতিতে সামরিক কর্তৃত্বের চিরবিদায় ঘটানোর প্রত্যাশায় মাঠে নেমেছিল। ব্যাপক শোডাউন ও সামাজিক মাধ্যমের কল্যাণে সচেতন যুব শ্রেণি এবার বুঝতে পেরেছে কিভাবে পেছনে থাকা পুতুল মাস্টারের সুতার টানে দেশের প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে আসেন এবং ওই একই সুতার টানে পালা শেষ না করেই মঞ্চ থেকে বিদায় নেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও