কাগজ সংকট এবং পুরোনো বই বিতরণ
রাঘববোয়ালরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায়, সেটি বেশ পুরোনো খবর। করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কিংবা ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে অস্থির বাজারদর- এগুলোও নিকট অতীতের খবর। মোটামুটি নতুন খবর হলো কাগজের দাম বেড়ে গেছে কিংবা কাগজের সংকট। দৈনিক সমকালে ১৪ নভেম্বরের 'কাগজও দামের চূড়ায়' শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী গত পাঁচ মাসের মধ্যে পাইকারিতে প্রতি টন কাগজের দাম বেড়েছে ৩৫ থেকে ৩৭ হাজার টাকা। একই দিনে দৈনিক প্রথম আলোতে 'কাগজের দাম চড়া, বিপাকে ছাপাখানা' শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী কাগজের দাম বাড়তে থাকায় তৈরি পণ্যে গত এক সপ্তাহে ৩০ শতাংশের মতো দাম বেড়েছে। কাগজ সংকটের কারণে বই প্রকাশ না করার ঘোষণা দিয়েছেন অনেক লেখক-প্রকাশক।
পত্রপত্রিকার তথ্য অনুযায়ী জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য এবার ৩৪ কোটি ৬১ লাখ ৬৩ হাজার কপি পাঠ্যবই ছাপানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক স্তরের ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৫৩ হাজার কপি এবং মাধ্যমিক স্তরের জন্য ২৪ কোটি ৬৩ লাখ ১০ হাজার কপি পাঠ্যবই। প্রায় ৩৫ কোটি বই ছাপাতে প্রয়োজন হবে মোট এক লাখ টন কাগজ। অস্থির কাগজের বাজারে কীভাবে সরকার এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করবে, সেটা এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের হাতে ভিন্ন কোনো অপশন আছে কি?
চলতি বছরের ২৫ জুলাই খরচ কমাতে কাগজের উভয় পৃষ্ঠায় প্রিন্ট করার নির্দেশনা দিয়ে আদেশ জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সে আদেশ কতটুকু প্রতিপালন হচ্ছে, তা জানার উপায় নেই। যে কোনো আদেশ পালনে যথাযথ কর্তৃপক্ষের তদারকি প্রয়োজন। সেটি কি আদৌ হচ্ছে?
শহর থেকে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত সরকার ডিজিটাল সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এই ডিজিটাল ফর্মুলা ব্যবহার করেও কাগজের খরচ কমানোর দারুণ সুযোগ আছে সরকারের কাছে। কারণ অফিসের নথি চালাচালি করতে গিয়ে এবং এর জন্য ড্রাফট তৈরি করতে গিয়ে কী পরিমাণ কাগজ অপচয় হয়, সেটা সবারই জানা। সুতরাং ই-নথি ব্যবহার করে কাগজের ব্যবহার অনেক কমানো যেতে পারে। দেশের অল্প সংখ্যক অফিস কিংবা দপ্তর ই-ইথি ব্যবহার করছে। এর পরিধি ব্যাপক হারে বাড়িয়ে সংকট মোকাবিলায় কাজে লাগানো যেতে পারে।