বাংলাদেশ কি স্ট্যাগফ্লেশনের ফাঁদে?
বাংলাদেশ কি যুগপৎ মূল্যস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক স্থবিরতার ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে অথবা পড়ে গেছে?
বিগত শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম কিংবা দ্বিতীয় দশকে পাশ্চাত্যের, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে নতুন এক উপসর্গ দেখা দেয়, যাকে অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা নাম দিয়েছেন ‘স্ট্যাগফ্লেশন’। স্ট্যাগফ্লেশন হলো স্ট্যাগনেশন (স্থবিরতা) ও ইনফ্লেশনের যোগফল।
স্ট্যাগফ্লেশন হলো এমন একটি অবস্থা, যখন একটি দেশ ধারাবাহিকভাবে উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং উচ্চ বেকারত্বে ভোগে। অর্থনীতিবিদরা একসময় মনে করতেন, মূল্যস্ফীতি হলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চাঙা হয় এবং উচ্চ বেকারত্ব মূল্যস্ফীতি হ্রাস করে।
এই বিশ্বাস যদি সঠিক হয়, তাহলে দেখা যাবে কোনো অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই দীর্ঘমেয়াদে এই বিবিধ সমস্যার কবলে পড়বে না। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, স্ট্যাগফ্লেশন অসম্ভব একটি ব্যাপার।
দুর্ভাগ্যবশত গত শতাব্দীতে যে স্ট্যাগফ্লেশন হয়েছিল, তা দীর্ঘমেয়াদে কেবল পারস্পরিকভাবে, অর্থাৎ অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও মূল্যস্ফীতি একসঙ্গে চলতে নাও পারে।
অর্থনৈতিক স্থবিরতা বা স্ট্যাগনেশন বলতে বোঝায় এমন একটি অবস্থা, যেখানে উৎপাদনের প্রযুক্তি অথবা আয়ের স্তরে তেমন কোনো পরিবর্তন হয় না। এ অবস্থাটি উন্নয়নের বিপরীত। উন্নয়ন না হওয়া মানে উৎপাদন প্রযুক্তিতে পরিবর্তন এবং আয়ের স্তর বৃদ্ধি না পাওয়া।
বাংলাদেশে এখন বহু বছরের মধ্যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি স্তর পরিলক্ষিত হচ্ছে। বাজারে সব ধরনের পণ্যসামগ্রীর দাম দেড়-দুই গুণ হয়ে যাচ্ছে। সরকারি হিসাবে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের মতো। ভোক্তারা তাদের জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে মনে করেন, মূল্যস্ফীতির এ হারটি খুবই রক্ষণশীলভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো যদি মূল্যস্ফীতি নির্ণয়ের পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে জনসমক্ষে নিয়ে আসতে পারত, তাহলে মূল্যস্ফীতির হার নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হতো।
- ট্যাগ:
- মতামত
- মূল্যস্ফীতি
- অর্থনৈতিক অবস্থা
- স্থবির