খরুচে কাতার বিশ্বকাপের অর্থনীতি
গত ২০ নভেম্বর ২০২২-এ পর্দা উঠল ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ বা ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল-২০২২-এর। আয়োজক দেশ কাতারের দেওয়া তথ্য মতে নিশ্চিতভাবেই এটি পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে খরুচে ক্রীড়া ইভেন্ট। কাতার বিশ্বকাপের আয়োজনে ২২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হচ্ছে। যদিও বিশ্বের অন্যতম সেরা ডেট এনালিটিক্স ও ফাইন্যান্সিয়াল প্রেডিকটর ‘ব্লুমবার্গ’র মতে এই খরচের পরিমাণ ৩০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে!
মধ্যপ্রাচ্যের অপেক্ষাকৃত অনুর্বর অঞ্চলে অবস্থিত মাত্র ১১,৫৮১ বর্গকিলোমিটার আয়তন এবং ২৮ লাখ জনসংখ্যার দেশ কাতার। বাহরাইনি-সৌদি-অটোম্যান সাম্রাজ্য থেকে ব্রিটিশ শাসনামল হয়ে ২০০ বছরের পরাধীনতার গ্লানি বহন করা দেশ কাতার। বাংলাদেশের সমসাময়িক অর্থাৎ ১৯৭১ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর গত ৫১ বছরে কাতারের অর্থনৈতিক অগ্রগামিতা, বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা, ব্যবসা-বাণিজ্যে ভূমিকা চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মতো। তাদের এই অর্থনৈতিক বিপ্লব শুরু হয়েছে গত শতকের ৮০-এর দশকে যখন ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামের সহায়তায় প্রথম তাদের ভূ-গর্ভস্থ তেল উত্তোলন করতে সক্ষম হয়।
২০০৮ সালে প্রণীত কাতারের প্রধানত কাতার ৪টি লক্ষ্য নিয়ে ন্যাশনাল ভিশন- ২০৩০ ছিল অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী একটি প্রকল্প। যার মধ্যে রয়েছেমানব উন্নয়ন, সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং পরিবেশগত উন্নয়ন। প্রশ্ন হলোমধ্যপ্রাচ্যের অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র রাষ্ট্র এবং একমাত্রিক অর্থনীতিবহুল একটি দেশ কীভাবে এমন বৈপ্লবিক ও উচ্চাভিলাষ দেখানোর সাহস করল? এর উত্তর লুকিয়ে রয়েছে তাদের তেলের মজুদের তথ্যে। ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য মতে, কাতার তাদের মজুদ তেলের মাত্র ১% উত্তোলন করেছে এবং বর্তমান হারে তেল উত্তোলন অব্যাহত থাকলে এই মজুদ শেষ হতে সময় লাগবে আরও ৪০২ বছর। বস্তুত আরব অঞ্চলের তথাকথিত যাযাবর ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতি না থাকা দেশ কাতার তার প্রাকৃতিক রিসোর্স ব্যবহার করে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী রাষ্ট্রে পরিণত হতে চাইছে। এটা সর্বজনবিদিত যে বিশ্বের কাছে নিজেদের তুলে ধরতে ক্রীড়ার চেয়ে ভালো ও প্রভাবশালী মাধ্যম কমই আছে। আর তা দেশটির সরকার ও বিনিয়োগকারীরা উপলব্ধি করেছেন। সেজন্যই বিশ্বের নানা প্রান্তের ফুটবল, টেনিস, ক্রিকেট, বেইসবলসহ নানান ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় কাতারি বিনিয়োগ দৃশ্যমান হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে ফরাসি ফুটবল ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন কিংবা ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যানচেস্টার সিটিতে কাতারি বিনিয়োগের কথা বলা যায়।